ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অযোগ্য দরদাতা পাচ্ছে ৮৪ কোটি টাকার কাজ

অযোগ্য দরদাতা পাচ্ছে  ৮৪ কোটি টাকার কাজ

.

 তবিবুর রহমান 

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৩৭

সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল সম্প্রসারণ প্রকল্পের চিকিৎসা যন্ত্র ক্রয়ে বড় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুটি প্যাকেজে ৮৪ কোটি টাকার কাজ অযোগ্য দরদাতাকে দেওয়ার সুপারিশ করেছে ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটি। জানা গেছে, দরপত্রের নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেও ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করে ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এর আগেও তিন দফায় বাতিল করা হয় এই দরপত্র।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রসারণ প্রকল্পের জিডি-১১ (এসকেএইচইউপি) ও জিডি-১২ (এসকেএইচইউপি) প্যাকেজের ৮৪ কোটি টাকায় ৩৭৪টি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি কেনার জন্য গত ১৩ আগস্ট সর্বশেষ দরপত্র আহ্বান করা হয়। জিডি-১১ প্যাকেজে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করতে পারায় দুই প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় বাদ পড়ে যায়। টিকে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আনিফকো হেলথকেয়ার ও মেডিকিট করপোরেশন। তবে আনিফকো দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

এই প্যাকেজে বহনযোগ্য কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর সরবরাহের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন সনদ থাকতে হবে যন্ত্রটির। তবে আনিফকো এফডিএর ভুয়া সনদ জমা দিয়েছে। মানে হলো, যন্ত্রটি এফডিএ  অনুমোদিত নয়।  

এ ছাড়া এই প্যাকেজে কার্ডিয়াক মনিটর (আইসিইউতে রোগীর হৃদস্পন্দন পরিমাপে ব্যবহার হয়) কেনার জন্য দরপত্রে এ গ্রুপের যন্ত্র নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপানের উৎপাদিত যন্ত্র এ গ্রুপের যন্ত্র ধরা হয়। তবে আনিফকো  চীন থেকে বি গ্রুপের যন্ত্র দিতে চায়। এ ছাড়া দরপত্রে চারটি আল্ট্রাসাউন্ড ট্রান্সডুসার প্রোবসহ মেশিন কেনার উল্লেখ করা হয়। তবে আনিফকোর প্রস্তাবে প্রোব দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। প্রোব না থাকলে মেশিনটি পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। 

দরপত্রের শর্তে পাঁচ চাকাবিশিষ্ট আইসিইউ শয্যার কথা উল্লেখ থাকলেও আনিফকো চার চাকা বিশিষ্ট আইসিইউ শয্যা সরবরাহ করার কথা আবেদনে উল্লেখ করেছে। এমন বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় ১৫টি শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে আনিফকো। এর পরও এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০১৮-তে ৫ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি যে কোনো দরপত্রকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে মূল্যায়ন করতে পারে। আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি, অসাবধানতাজনিত ভুল বা বিচ্যুতি থাকলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আবেদনে যন্ত্রের মানে কোনো বিচ্যুতি থাকলে কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। আনিফকোর আবেদনে অধিকাংশ বিচ্যুতি যন্ত্রের। তবুও এই প্রকল্পের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই অনিয়মের জন্য প্রকল্প পরিচালক আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৫ অক্টোবর এক ঠিকাদারি প্রতিঠান এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রকল্প পরিচালক সিদ্দিকুরকে ১৬ অক্টোবর সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। অফিস আদেশে বলা হয়, জনস্বার্থে অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে। তবে প্রকল্প পরিচালক এখনও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করছেন।

দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের  এম এন নাশিদ রহমান সমকালকে বলেন, দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সব সময় টেকসই ও ভালো মানের যন্ত্র কেনার জন্য নানাবিধি শর্ত দিয়ে থাকে। দরদাতাদের আবেদনে কোনো বিচ্যুতি থাকলেও তা মূল্যায়ন কমিটিকে লিখিত আকারে জানায়। এই দরপত্রের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মানা হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।
প্রকল্প পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া কাজ দেওয়ার সুপারিশ করা হলেও তা তো আপনার জানার কথা নয়। 
শর্ত ভঙ্গের কারণে আনিফকোর আবেদন বাতিল করা হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ম মেনে হচ্ছে। অনিয়ম করে কার্যাদেশ পাওয়ার সুযোগ নেই। বদলি আদেশ হওয়ার পরও কেন কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে অনিফকো হেলথকেয়ারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল বাতেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি  দেশের বাইরে। এর পর আব্দুল বাতেনের হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগের বিষয় জানিয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। 

আরও পড়ুন

×