ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বীরকন্যাদের রাজসিক বরণ

বীরকন্যাদের রাজসিক বরণ

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বৃহস্পতিবার নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের বীরকন্যারা। রাজধানীর রাস্তায় ছাদখোলা বাসে বিজয় শোভাযাত্রা -মাহবুব হোসেন নবীন

 সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৫ | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪ | ০৬:৪৬

ওদের জন্যই তো এত আনন্দ আয়োজন। ফুলে ফুলে সাজানো ছিল ছাদখোলা রঙিন বাসটি। গায়ে তার শুধুই সাফজয়ী বীরকন্যাদের ছবি। লাল রঙের বাসে নেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কারও ফ্রেম; যেমনটি ছিল ২০২২ সালে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিন্ন আমেজে গতকাল বাংলাদেশের বীরকন্যাদের রাজসিকভাবেই বরণ করে নিয়েছেন সবাই। হিমালয়ের দেশে দ্বিতীয়বারের মতো নারী সাফের শিরোপা জেতা বাংলাদেশের মেয়েদের ছাদখোলা বাসটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিন ঘণ্টা পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে সন্ধ্যায় পৌঁছে তাদের দ্বিতীয় বাড়ি মতিঝিলের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বুধবার নেপালকে হারিয়ে সাফ জেতা বাংলাদেশ নারী দলকে ১ কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার দেন সজীব ভূঁইয়া। তার সঙ্গে এদিন মেয়েদের ২০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ বাসভবনে সাফজয়ী দলকে সংবর্ধনা দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এই নেপালেই সাবিনা খাতুনরা প্রথমবার হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। সেই সময়েও  ছাদখোলা বাসে বরণ করা হয়েছিল তাদের। এবার সাফল্য ধরে রাখার অনন্য কীর্তি গড়া অদম্য মেয়েদের জন্য একই আয়োজন করে বাফুফে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন সংবাদমাধ্যমের কর্মী থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমীরা। দুপুর সোয়া ২টায় মেয়েদের বহন করা বিমান অবতরণ করে।

 কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিকেল ৩টার পর কোচ পিটার বাটলার, অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা এবং রুপনা চাকমা ট্রফি নিয়ে হাজির সংবাদমাধ্যমের সামনে। ব্যতিক্রমধর্মী এই ছোট্ট সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির কেউই। সংবাদমাধ্যমের উপচে পড়া ভিড়ে সাবিনাদের কথার আওয়াজ সেভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। এত মানুষের উপস্থিতি দেখে বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে মনে হয়েছে প্রথমবার যেন ট্রফি জিতেছেন, ‘আমি ধন্যবাদ দিতে চাই সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ও বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ নতুন কমিটিকে। সবার দোয়া ও সমর্থনে এই সফলতা এসেছে। দ্বিতীয়বার হলেও ঠিক প্রথমবারের মতোই অনুভূত হচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল কতটা ভালোবাসে।’

মাত্র ছয় মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের মিনিট বিশেক পরই দেখা মিলল আসল উন্মাদনার। একে একে ছাদখোলা বাসে উঠতে থাকেন নারী ফুটবলাররা। সঙ্গে পুরো কোচিং স্টাফ। বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নেই কেউ। অথচ দুই বছর আগে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে ছিল ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের আধিক্য। বিদেশে থাকা নতুন সভাপতি কাজী তাবিথ আউয়াল এসে এই প্রথা বন্ধ করেছেন। শুধু সাফজয়ী দলকেই প্রাধান্য দিতে বলেছেন। বাস্তবে সেটার দেখাই মিলেছে। বিমানবন্দর থেকে বিকেল পৌনে ৪টায় ছাদখোলা বাস ছাড়ার আগে সমর্থকরা ফ্লেয়ারের মাধ্যমে রঙিন ধোঁয়া উড়িয়েছেন। রাস্তার দু’পাশে জড়ো হওয়া সমর্থকরা তাদের অভিবাদন জানিয়েছেন। মেয়েদের ভ্রমণের এই দৃশ্য অনেককে দেখা গেছে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করতে। নির্দিষ্ট রুট দিয়ে বাফুফে ভবনে আসতে লেগে যায় তিন ঘণ্টার মতো। এই সময়ে চ্যাম্পিয়নরা পুরোটাই নানাভাবে মেতেছিল। গাড়ি থেকে ভক্তদের উদ্দেশ্যে ফুল ছুড়েছিল, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে আপন করে নিয়েছেন ঋতুপর্ণা-মনিকারা।

বাফুফে ভবনেও ছিল একই দৃশ্য। অন্ধকার ভেদ করে ধোঁয়া উড়িয়ে সাবিনাদের বরণ করে নেন দুপুর থেকেই ফেডারেশনের সামনে অবস্থান করা সমর্থকরা। তারা ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে প্রকম্পিত করে রাখে পুরো এলাকা। উপচে পড়া সমর্থকদের ভেদ করে মেয়েরা সোজা চলে যান ভবনের তৃতীয় তলার কনফারেন্স রুমে। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সংবর্ধনার পর মেয়েদের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে নারী ফুটবল দল নিয়ে বৈষম্যের সমাধানের আশ্বাস ক্রীড়া উপদেষ্টার, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট ও নারী ফুটবল দল নিয়ে বৈষম্য ও ফ্যাসিলিটিজের ব্যাপারে কিছু অভিযোগ আছে। এনিয়ে আমরা বাফুফের সঙ্গে কথা বলেছি এবং বিসিবির সঙ্গেও কথা বলছি। এ সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব বলে আমরা আশা রাখছি। বাংলাদেশের নারীরা যেভাবে আন্তর্জাতিক অর্জন ছিনিয়ে আনছে, আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে আরও বড় ট্রফি জিতবে ইনশাআল্লাহ। তারা আরও জয় এনে দিতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী। সে জন্য যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।’

আরও পড়ুন

×