গাছ কাটার বিষয়ে আইন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১৯:১২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশে গাছ কাটার বিষয়ে কোনো আইন নেই। গাছ কাটা নিয়ে আইনের খসড়া করা হবে। ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ যাতে না বাড়ে তা নিয়েও কাজ করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ‘নতুন বাংলাদেশে পরিবেশ, জলবায়ু ও রাজনীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে রাজধানীর পান্থপথের পানি ভবনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্বে যত পরিবেশগত সমস্যা রয়েছে তার প্রায় সব সমস্যাই বাংলাদেশে আছে। বায়ু, পানি, শব্দ সবই দূষণের কবলে। এগুলো সমাধানে অনেক সময় লাগবে। অন্তর্বর্তী সরকার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাবে। তবে সব কাজ হয়তো শেষ করে যেতে পারব না। যারা ভোগবাদী অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে চায় এবং যারা জীবাশ্ম পোড়াচ্ছে তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা মানতে চায় না। তাই মার্কিন নির্বাচনের পর জলবায়ু ইস্যু নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ চলে যাবে সমুদ্রের নিচে৷ বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে এক মিটারের মধ্যে যেসব এলাকা আছে, তা ডুবে যাবে। উপকূলীয় জেলাগুলো টিকবে কিনা, তা একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। উপকূলীয় জেলার মধ্যে সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, মোংলা, খুলনা, সাতক্ষীরার কথা উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি জানান, আগ্নেয়গিরি ছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সবকিছু বাংলাদেশে রয়েছে। আমাকে কত বছর সময় দিবেন এই জঞ্জাল সমাধান করতে? ৫৩ বছরের জঞ্জাল চাইলেই তো সমাধান করা যায় না।
জাহাজ ভাঙাকে শিল্প হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। বলেন, উন্নত বিশ্ব জানে এগুলোর নেতিবাচক দিক। তাই ওরা আমাদের দেশে পাঠায়। আওয়ামী লীগ সরকারের নানা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে— অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এক সংগঠকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অনেক কথা আবেগে বলে ফেলি। না জেনে অনেক কথা বলে ফেলি। শুনেছেন! শুনে কাউকে দোষারোপ করবেন, এটা হবে না। জানবেন, তারপর বলবেন।
বরাদ্দ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের সময় আমরা সাতটা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি।
সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে শুধু এই বছর ১১টা প্রবাল আছে, এমন দ্বীপে পর্যটন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ প্রবাল থেকে এলজিন সরে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ সরে গেছে। তার বন্ধ করে দিয়েছে৷ আমরা বন্ধ করিনি। আমরা বলেছি, নভেম্বর, ডিসেম্বর যেতে পারবে। দুই হাজার করে লোক যেতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাও যেতে পারে না। সরকার এই সুযোগটা দিয়েছে ওখানকার মানুষের দিকটা বিবেচনা করে৷ যদি সেন্টমার্টিন ডুবে যায়, তখন ওখানকার বাসিন্দাদের কী হবে? সেন্টমার্টিনে পর্যটন খাতের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নদী দখলমুক্ত করতে এবং টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে প্রস্তাবনা দিতে নদী আছে এমন জেলার জেলা প্রশাসককে মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত দুই মাসে ৫৭টা জেলা থেকে প্রস্তাব এসেছে। দেশের নদী, খাল, বিল, হাওড়ের তালিকা করা হয়েছে। দ্রুতই সেই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বন সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় সব ভালো উদ্যোগ শুরু করে রেখে যেতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তরুণদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যুবসমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, আরডিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আরিফুল ইসলাম আদিব এবং প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, পরিবেশবিদ ও তরুণ পরিবেশকর্মীরা অংশ নেন এবং মতবিনিময় করেন। উপদেষ্টা এরপর সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্সের নেতার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।