ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বিদায়লগ্নেও ঢাকা আসছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

বিদায়লগ্নেও ঢাকা আসছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

.

 তাসনিম মহসিন

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:১৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি বিদায় নিচ্ছেন। তাঁর মেয়াদের শেষ মুহূর্তে ঢাকা আসছেন দেশটির শ্রমবিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্যালি ফে রডরিগেজ। তাঁর সফরে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম আইনের সংস্কার। 

২২ নভেম্বর পাঁচ দিনের সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক ব্যুরোর আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি রডরিগেজ। তাঁর নেতৃত্বে মার্কিন শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধি ছাড়াও দেশটির উন্নয়ন সহযোগী ইউএসএআইডিসহ অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধিরা থাকবেন। প্রতিনিধি দলটি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াও শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

রডরিগেজের ঢাকা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, এ দেশের শ্রম বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ দূর হয়নি। বিশেষ করে শ্রম অধিকার, শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে ৫ আগস্টের আগে তারা যেমন সোচ্চার ছিল, তেমনি ড. ইউনূস সরকারের সময়েও সোচ্চার রয়েছে। শেষ মুহূর্তে মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে এবং নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হিসেবে এ সফর।

সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি শ্রম খাত সংস্কারেও কাজ করছে। এ খাতে সংস্কারের জন্য একটি কমিশনও করা হয়েছে। বিষয়গুলো মার্কিন প্রতিনিধি দলকে জানানো হবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যে পথনকশা রয়েছে, তা অনুসরণ করবে ঢাকা। তাদের পক্ষ থেকে শ্রম আইনের সংস্কার, শ্রম অধিকার রক্ষা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়া, শ্রম সংগঠনের স্বাধীনতার মতো বিষয় তুলে ধরা হবে।

মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাটদের শ্রমিকবান্ধব সরকার হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। দলটি শুধু নিজ দেশেই নয়, ক্ষমতায় গেলে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকে। আর এ কারণে শ্রমিকদের ভোট ডেমোক্র্যাটদের দিকেই বেশি যায়। ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শ্রম অধিকারকে ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের মালিকবান্ধব সরকার হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। এ দলটিই মালিকদের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অ্যান্টি-ইউনিয়ন’ বা শ্রম সংগঠনবিরোধী আইন প্রণয়ন করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ে যতটা সোচ্চার ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার গঠনের পর এ বিষয়ে তাদের নজর থাকবে না। তবে মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। রডরিগেজের এ সফরের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা ভবিষ্যতে দেখাতে পারবে যে, সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত দলটি শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করে গেছে।

রডরিগেজ একসময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৃহত্তম আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংস্থা সলিডারিটি সেন্টারের সঙ্গে কাজ করতেন। ২০২০ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক ব্যুরোর আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির একটি পদ তৈরি করা হয়। 

ট্রাম্প প্রশাসন এ পদ রাখবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রডরিগেজ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার গঠন করলে ক্যালি রডরিগেজকেও চলে যেতে হবে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিশ্বে শ্রম অধিকার রক্ষায় নতুন নীতি বা দিকনির্দেশনা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শ্রমবিষয়ক মেমোরেন্ডামটি ঘোষণাকালে তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের নাম নিয়েছিলেন। 

সে সময় বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে দেশটি। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। ট্রাম্প প্রশাসন এ নীতি রাখবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

 

আরও পড়ুন

×