ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

শ্রম খাত নিয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত

শ্রম খাত নিয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত

.

 তাসনিম মহসিন

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:০৮

বাংলাদেশে শ্রম খাত নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ এখনও কাটেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শ্রম খাতের সংস্কারে যে পথে হেঁটেছে, অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটবে। তাই এ খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারে সরকারকে চাপে রাখবে উন্নয়ন অংশীদাররা। শ্রম নিয়ে তাদের সঙ্গে সরকারের ৩‍+৫‍+১ বৈঠক হবে আজ মঙ্গলবার। এ বৈঠকে কিছু প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন অংশীদাররা।

রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশের শ্রম খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারে টেকসই কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে উন্নয়ন অংশীদাররা। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জার্মানি, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অগ্রগতি নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হয়। এটিকে ‘৩‍+৫‍+১ বৈঠক’ বলা হয়ে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং আইএলওর বাংলাদেশপ্রধান বৈঠক করতেন। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রায় প্রতিটি বৈঠকে অংশ নিয়েছে।

পরিবর্তিত বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি শ্রম খাতের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের সুযোগ হিসেবে দেখছে পশ্চিমারা। ফলে বিগত সরকারের আমলে প্রত্যাশিত যে সংস্কারগুলো করা হয়নি, এখন তা আদায়ের সুযোগ মনে করছে তারা। তবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছে সরকার। শ্রম খাতের সংস্কার এমনভাবে করতে চায়, যেখানে শ্রমিকসহ শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। এদিক থেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পথে হাঁটবে বর্তমান সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর দেশের কারখানাগুলোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার মানদণ্ডে। বর্তমানে দেশে পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিড সনদযুক্ত কারখানার সংখ্যা ২০৬। এর মধ্যে ৭৬টি সর্বোচ্চ প্লাটিনাম রেটিং অর্জন করেছে। ৫০০টির বেশি কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ থেকে বলাই যায়, বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শ্রমিক সংগঠনবিরোধী কোনো আইন নেই। এখন পশ্চিমারা যদি তাদের দেশের বাস্তবতায় বাংলাদেশে শ্রম আইন চায়, সেটি বাস্তবসম্মত হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সময়ে সময়ে শ্রমের সংস্কার হতেই পারে। বাংলাদেশে শ্রম খাতে পশ্চিমা চাপকে তাদের দাবি আদায় বা ‘বারগেনিং টুল’ হিসেবে বিবেচনা করে।
পশ্চিমারা বলছে, আইএলওর ‘পথনকশা’, ইইউর জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম কর্মপরিকল্পনা যেন বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করে। বিশেষ করে এমন একটি শ্রম আইন করতে হবে, যা পুরো বাংলাদেশে কার্যকর হবে। এ ছাড়া শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন স্থানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন যাতে না হয়। শ্রম সংগঠন করার নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং বিদ্যমান আইনে শ্রম সংগঠন করার জন্য যে সংখ্যক শ্রমিকদের একত্র হওয়া দরকার, তা কমিয়ে আনতে হবে। সংগঠনগুলোর অবরোধ করার বাধা দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে অবরোধকে অবৈধ বলে শাস্তির বিধান দূর করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ধারা রাখতে হবে। শ্রম পরিদর্শক নিয়ে অংশীদারদের উদ্বেগ রয়েছে।

পশ্চিমা দেশের এক রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বের হয়ে ওপরে যেতে বাংলাদেশকে শ্রম খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে হবে। আগামী ৬ মাস থেকে ১ বছর প্রয়োজনীয় সংস্কারে সরকার কী পরিমাণ অগ্রগতি করে, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করব। আর বাংলাদেশের এ পথচলায় আমরা পাশে থাকতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার প্রবেশ আরও সহজ হয়।
৩+৫‍+১ বৈঠকে কিছু প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন অংশীদাররা। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালে সর্বনিম্ন মজুরির দাবিতে আন্দোলনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলোর অবসান; শ্রম সংগঠন যাতে স্বাধীনভাবে নিবন্ধন করতে পারে; শ্রম সংগঠনবিরোধী সংঘাত এবং শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করাসহ অন্যায্য শ্রম অনুশীলন বন্ধ চায় তারা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ট্রাইপার্টাইট কনসালটেটিভ কাউন্সিলকে (এনটিসিসি) আরও কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চায় পশ্চিমারা। তারা সর্বশেষ সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক, আধুনিক এবং ঘন ঘন মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে।

 

আরও পড়ুন

×