পরীক্ষা-ভাইভা নিয়েও ফের বিজ্ঞপ্তি জারির পাঁয়তারা

প্রতীকী ছবি
অমরেশ রায়
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৬ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১০:৩২
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইব্লিউটিএ) ৭৩টি লস্কর পদে উত্তীর্ণদের নিয়োগ না দিয়ে পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির পাঁয়তারা চলছে। দুই বছর আগে পরীক্ষা ও ভাইভা নিয়েও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন আগের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পছন্দের প্রার্থীদের এসব পদে বসাতে চাইছেন সংস্থার প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ বাণিজ্যের লক্ষ্যেই কর্মকর্তারা এমন অনিয়মতান্ত্রিক পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত তাদের চাপেই বিআইডব্লিউটিএ পুনর্নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে আগের লস্কর পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হলে ব্যয়কৃত সরকারি কোষাগারের ২৫ লাখ টাকার পুরোটাই গচ্চা যাবে। পাশাপাশি নতুন করে পরীক্ষা নিতে আরও ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে, যা হবে সরকারি অর্থের আরেক দফা অপচয়। এ অবস্থায় ২০২২ সালের অক্টোবরে ৭৩টি লস্কর পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা।
বিআইডব্লিউটিএর পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার মানববন্ধন করেছেন তারা। এ মানববন্ধনের আগে ফলপ্রত্যাশীরা সংস্থার চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবির বিষয়ে স্মারকলিপি দেন এবং কথাবার্তা বলেন। তবে দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়ায় তারা মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এর আগেও লস্কর পদের মৌখিক পরীক্ষার ফলপ্রত্যাশীরা দ্রুত ফল প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিএর চতুর্থ শ্রেণির ৭৩টি লস্কর পদসহ ২৪ ক্যাটেগরির ৩৬৩টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০২২ সালের ২৯ মার্চ। ওই সময়ই যথাযথ সব প্রক্রিয়া শেষ করে ২০ ক্যাটেগরির ২৮০ জনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ঝুলিয়ে রাখা হয় ৭৩টি লস্কর পদের নিয়োগ। এ পদে যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ আবেদনপত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৬৩। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে প্রায় ৪৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০৩ প্রার্থী ২০২২ সালের অক্টোবরে মৌখিক পরীক্ষা দেন। এর পর চূড়ান্ত নিয়োগ হওয়ার আগমুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। এদিকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্থার প্রভাবশালী কর্মকর্তারা আগের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল এবং নতুন সার্কুলার দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে অর্থ বাণিজ্য করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রমতে, অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলরত বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন জাহাজগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে লস্কর পদে নিয়োজিত কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তবে আগে থেকেই লস্করের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকার পাশাপাশি নতুন ৭৩টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখায় জাহাজ পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এমন সংকট এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগ নিয়ে ওইসব প্রভাবশালী কর্মকর্তা লস্কর পদে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দিতে নতুন করে ছক কষছেন বলে জানান প্রার্থীরা। এরই মধ্যে আগে ‘আওয়ামী সমর্থক’ পরিচয় দেওয়া এসব কর্মকর্তা ‘বিএনপিপন্থি’ পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
নিয়োগ কমিটির তৎকালীন আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন জানান, বিআইডব্লিউটিএ থেকে বদলি হওয়ার আগেই ৭৩টি লস্কর পদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ করেছিলেন তিনি। তবে নিয়োগ কমিটির সদস্যরা একমত হতে না পারায় চূড়ান্ত ফল বা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে আসতে পারেননি।