ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রতিক্রিয়া

আন্দোলন সংঘাতে ত্যক্ত-বিরক্ত সবাই

আন্দোলন সংঘাতে ত্যক্ত-বিরক্ত সবাই

কোলাজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:০৫ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৩৯

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজপথে আন্দোলন হচ্ছে। ঘটছে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, সংঘর্ষ, হতাহতের ঘটনা। যার প্রভাবে ভোগান্তিতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত, বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। বিশেষ করে ঘন ঘন অবরোধ, বিক্ষোভ, সংঘর্ষের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ায় তীব্র যানজটে জনভোগান্তি বাড়ছে। গত সপ্তাহ থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সবাইকে। নতুন করে গত দুই-তিন দিনে বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দুর্ভোগের মাত্রা চরমভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরকার বারবার বলছে, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে জনগণকে জিম্মি করে যেন আন্দোলন করা না হয়। কিন্তু তাদের আহ্বানে ভ্রুক্ষেপ করছেন না আন্দোলনকারীরা। সবার মধ্যে যেন ধারণা গড়ে উঠেছে, সড়ক অবরোধ করলেই দাবি আদায় সহজ হবে। আর আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সরকার বলছে, জানমালের ক্ষতি বাড়বে, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগ করছে না। বরং রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতারা এসব আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের উস্কানি দেখছেন। এসব আন্দোলনের পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে।  

গতকাল সোমবার এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের অন্য যে কোনো অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’ শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

খানিকটা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম। তাঁর মতে, ‘বাম ও ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশকে অস্থির করে রেখেছে।’ 
গতকাল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র-তরুণবিরোধী শক্তি’ শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে মাহফুজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরের দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে হত্যার ইতিহাস। 

যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তেমনিভাবে একটি দল এবং দেশি-বিদেশি সুযোগসন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট গত তিন মাসে ছাত্রদের সম্মানহানি করেছে, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে, অন্য একটি তরুণ দলকে লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে। তদুপরি ছাত্রদের সঙ্গে সম্মানজনকভাবে ডিল তো করেইনি বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে এগোনোর। কিন্তু হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

একই বিষয়ে গতকাল ফেসবুকে লিখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি লেখেন, ‘শত চেষ্টা ও বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেল না। শিক্ষার্থীদের আগ্রাসী মনোভাব ও প্রস্তুতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হতো।’ তারপরও সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেন জানান তিনি।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণের সম্পদ। যদি কেউ অযৌক্তিক কারণে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে, সে যে পরিচয়েরই হোক না কেন; দেশের স্বার্থে তাদের প্রতিহত করে জনমানুষের নিরাপত্তা প্রদান করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ।’

তবে দেশে চলমান অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত দেখছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে অনেকে বিভিন্ন ব্যানারে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের দুরভিসন্ধি নিয়ে মাঠে সক্রিয় হতে চাইছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসের মধ্যে সবার সব দাবি-দাওয়া পূরণ তাদের পক্ষে সম্ভব না। এসব জানার পরও যারা এই নৈরাজ্য করছে, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তাদের পেছনে গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তির ইন্ধন রয়েছে।’

আরও পড়ুন

×