ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়

সেবা সপ্তাহে নেই সাড়া সুনসান নীরবতা

আজ শেষ হচ্ছে সেবা সপ্তাহ

সেবা সপ্তাহে নেই সাড়া সুনসান নীরবতা

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এ বছরও ‘সেবা সপ্তাহ’ পালন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রচার না থাকায় তেমন সাড়া মেলেনি। সোমবার দুপুরে তোলা -সমকাল

 আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৫০

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ‘সেবা সপ্তাহ’ পালন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এতে সাড়া নেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তারা জানেনও না, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের প্রবেশদ্বারে শুধু একটি ব্যানার টানানো হয়েছে। সেবা সপ্তাহ বলা হলেও তা কাগজ-কলমে, কারণ এর মধ্যে দুই দিন ছিল শুক্র ও শনিবার। আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে সেবা সপ্তাহ। 

গতকাল সোমবার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় সুনসান নীরবতা। প্রবেশদ্বারের ডান দিকে ‘সেবা কর্নার’ লেখা একটি ব্যানার রয়েছে। এ ছাড়া বাম দিকে লিফটের সামনে রাখা হয়েছে সেবা সপ্তাহ লেখা ‘এক্স ব্যানার’। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত চেয়ারগুলো ফাঁকা। সেবা সপ্তাহ কর্নার ডেস্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিস সহকারী মফিজুল ইসলাম জানান, সকালের দিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান এসেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ডেস্কে গিয়ে দেখা যায়, অন্য দিনগুলোর মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ কোনো তৎপরতা নেই। ডেস্কগুলো প্রায় সবই ফাঁকা। 

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন ৩ থেকে ৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান নানা কাজে মন্ত্রণালয়ে আসেন। এবারের সেবা সপ্তাহে উপস্থিতি প্রায় তেমনই। এর কারণ প্রসঙ্গে জানা যায়, সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে এবার প্রচার-প্রচারণায় ঘাটতি প্রকট। এ-সংক্রান্ত কোনো আয়োজনই ছিল না। সেবা সপ্তাহ কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানোর জন্য এবার র‍্যালির আয়োজন বা অন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বা নোটিশও পাওয়া যায়নি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট তিনটি ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার শুরু হওয়া সেবা সপ্তাহে এ পর্যন্ত ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সেবা নিয়েছেন। বছরের অন্যান্য সপ্তাহেও একইভাবে মুক্তিযোদ্ধারা সেবা নিয়ে থাকেন।

২০১৯ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতি বছর সেবা সপ্তাহ পালন করে আসছে। ওই বছরের মে মাসে সপ্তাহ পালন করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এ সপ্তাহ পালন করা হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধাই সেবা সপ্তাহে সমস্যার দ্রুত সমাধান পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন।

সেবা সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা থেকে গেজেট সংশোধন, গেজেট সংশোধন-সংক্রান্ত তথ্য প্রদান এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুপারিশের আলোকে গেজেট প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং চাকরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিকাল বর্ধিতকরণের প্রত্যয়ন প্রদান করে প্রত্যয়ন শাখা। হিসাব শাখার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়। শহীদ এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ছাড়পত্র যাচাইকরণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জমি, প্লট, বাড়িসংক্রান্ত আবেদন যাচাইকরণ ও অগ্রায়ণ-সংক্রান্ত বিষয় সমাধান করে উন্নয়ন শাখা। এ ছাড়াও সেবা সপ্তাহে বিশেষ ব্যবস্থায় এসব সেবা তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করার কথা। প্রতিবছর এসব সেবা নিতে মুক্তিযোদ্ধার ভিড় থাকলেও এবার তাতে কোনো সাড়া নেই।
আমরা একাত্তরের সভাপতি মাহবুব জামান সমকালকে বলেন, ‘পট পরিবর্তনের পর নানা প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধারা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেবা সপ্তাহে তারা দ্রুত সেবা পেতেন। কিন্তু কর্মসূচির খবর এবার গণমধ্যমেও প্রচার হয়নি। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আরও হতাশার।’

মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বা পরিবারের সদস্যরা যে কোনো বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কাগজপত্রের ভিত্তিতে আবেদনে লিখিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই। উপদেষ্টা দুটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাই তিনি সপ্তাহে দুই-তিন দিন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আসেন। আবার নির্ধারিত সময় ছাড়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনি দেখাও করেন না। ফলে কাজের গতি কমেছে।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এবার অনাড়ম্বরভাবে সেবা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণভাবে কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কারণে গণমাধ্যমেও আসেনি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বছরের অন্যান্য দিনেও তারা যেন দ্রুত সেবা পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।’

আরও পড়ুন

×