ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মাঠের অভিজ্ঞতা না থাকলেও হতে পারবেন ডিসি

মাঠের অভিজ্ঞতা না থাকলেও হতে পারবেন ডিসি

প্রতীকী ছবি

 দেলওয়ার হোসেন

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৬:০৬ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৮:১১

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগে ফের ফিটলিস্ট হচ্ছে। নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে চার মাস পরই নতুন তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। তবে এবারও শর্ত শিথিল থাকছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে কাজ না করলেও ডিসি হতে পারবেন। কিন্তু ইকোনমিক ক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়া কর্মকর্তারা ওই দুই পদে কাজ না করে ডিসি হতে পারবেন না। এ ছাড়া লিয়েনে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের লিয়েনের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি, তারা ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হবেন না।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই এমন কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ দিলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন কিনা– এ প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসি হতে হলে মাঠের কাজের ধরন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে অল্প সময়ের ব্যবধানেই ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন তালিকার জন্য আগামী শনিবার ২৫ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তবে এ তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের একান্ত সচিব সানোয়ার হোসেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমান সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদবঞ্চিত ছিলেন। ফলে অনেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে দুই বছর কাজ করার সুযোগ পাননি। এ জন্য মাঠ প্রশাসনের এসব পদে দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা ছাড়াই ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তালিকাতেও এ শর্ত শিথিল করা হয়েছিল। আগামী ডিসি ফিটলিস্ট না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। 

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ইউএনও-এডিসি না হলে ডিসি হিসেবে সঠিকভাবে কাজ করা কঠিন হতে পারে। কারণ, মাঠের কাজের ধরন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, শুধু ইকোনমিক ক্যাডারের জন্য নয়, প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্যও মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। সরকার প্রয়োজন মনে করলে লিয়েনে থাকা কর্মকর্তাদেরও যে কোনো সময় কাজে লাগাতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীদের পদায়ন নীতিমালা-২০২২-এ বলা হয়েছে, ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, এডিসি, জেলা পরিষদের সচিব, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউএনও উভয় পদে মোট ন্যূনতম দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী শনিবার ডিসি ফিটলিস্টের কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন তালিকা তৈরির জন্য ওই দিন সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। তবে যারা এই তালিকাভুক্ত হতে ইচ্ছুক নন, তাদের এ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এ কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক দিন পরপর চলমান থাকবে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এ তালিকা তৈরি করা হবে। 

ডিসি হওয়ার দৌড়ে তিন ব্যাচের ৫০৯ কর্মকর্তা 

নতুন ডিসি ফিটলিস্টের জন্য প্রশাসন ও পূর্বতন ইকোনমিক ক্যাডারের বিবেচিত কর্মকর্তা রয়েছেন ৫০৯ জন। এর মধ্যে আছেন ২৫তম ব্যাচের ১৩৪ জন, ২৭তম ব্যাচের ২০৫ জন এবং ২৮তম ব্যাচের ১৫৮ জন। তবে ২৫তম ব্যাচের ৪২ জন ও ২৭তম ব্যাচের ৩০ জন কর্মকর্তা আগে ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। এ লিস্টে মোট কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৬১ জন। তদন্ত প্রতিবেদন নেতিবাচক হওয়ায় বাকি কর্মকর্তাদের কেউ নিয়োগ পাননি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ফিটলিস্টভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ডিসি হিসেবে নিয়োগ হননি, তাদের মধ্যে কয়েকজনের তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক ছিল। তবে নেতিবাচক প্রতিবেদনের কথা বলে দ্রুত নতুন তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আবার আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। 

‘সুবিধাভোগীদের যেন নিয়োগ দেওয়া না হয়’

বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ডিসি পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে যেন শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অথবা আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া না হয়। আগের নিয়োগে এসব কারণে অনেক বিতর্ক হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগীদের সাক্ষাৎকারে না ডাকাই ভালো হবে।

তালিকায় ১ নম্বরে থাকা জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক সানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ডিসি ফিটলিস্টের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের তালিকা ওয়েবসাইটে দেখেছি; মেধাতালিকায় ওপরে থাকায় আমার নাম রয়েছে। তবে আমি সাক্ষাৎকার দেব না। সাক্ষাৎকারে অংশ না নেওয়ার সুযোগ রেখেছে ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, সর্বশেষ তালিকা দ্রুত সময়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই ভালোভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নেওয়া সম্ভব হয়নি। আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, এর পর তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এ জন্য সর্বশেষ ফিটলিস্টের কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগ না দিয়ে নতুন তালিকা করা হচ্ছে। আবার ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দ্রুত যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাবেন। এ ব্যাচের ২৬ জন বর্তমানে ডিসি হিসেবে আছেন। যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলে তারা এ পদে থাকতে পারবেন না।

আরও পড়ুন

×