মেনিনজাইটিস টিকার সংকট, উদ্বেগে ওমরাহযাত্রী

হজযাত্রীদের সর্দি-কাশি ও অণুজীবের সংক্রমণ প্রতিরোধে সৌদি আরব যাত্রার আগে মেনিনজাইটিস ও সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে হয়। নতুন করে ওমরাহযাত্রীদের জন্যও মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি সরকার। দেশটির এ পদক্ষেপের পর গত সোমবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও ওমরাহযাত্রীদের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে দেশে টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বেগে আছেন ওমরাহযাত্রীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেনিনজাইটিস টিকা আমদানিনির্ভর। হজযাত্রীদের বাইরে দেশে বছরে ৪-৫ হাজার টিকার চাহিদা রয়েছে। তাই চাইলে স্বল্প সময়ে এত টিকার জোগান দেওয়া কঠিন। এতে অনেক ওমরাহযাত্রীর সৌদি যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা সংকট মেটাতে কাজ করছে।
এদিকে হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় হাসপাতালগুলো মেনিনজাইটিস টিকা সরবরাহ করতে পারছে না।

গতকাল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন সৌদিগামী  অন্তত ৩০০ যাত্রী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। বিক্ষোভকারীরা জানান, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, স্কয়ার হাসপাতালে গেলে টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে দৈনিক ১০ থেকে ১৫টি টিকা দেওয়া হচ্ছে। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার টিকিট কাটা আছে। কিন্তু যাওয়ার আগে টিকা নিতে হবে। ট্রাভেল এজেন্ট থেকে বলেছে, স্কয়ার হাসপাতালে গেলে টিকা নেওয়া যাবে। কিন্তু এখানে টিকা নেই।’

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আগের দিন আমাদের টিকা ফুরিয়ে যাওয়ায় দিতে পারিনি। এটা শুনে বিক্ষোভকারীরা চলে যান। বর্তমানে সারাদেশেই টিকার ঘাটতি রয়েছে। পরবর্তী চালান কবে আসবে আমরা জানি না।’

গত সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামের সই করা এক চিঠি বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দর স্টেকহোল্ডারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, হজের নিয়ম অনুযায়ী ওমরাহ বা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে ভ্রমণকারী সবাইকে মেনিনজাইটিস টিকা নিতে হবে। এটি কর্মী ভিসার ক্ষেত্রে দরকার হবে না। এই নির্দেশিকা আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ওমরাহ ও হজযাত্রীদের ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে টিকা নিতে হবে। প্রতিবছর দেশ থেকে কয়েক লাখ মানুষ ওমরাহ করতে যান। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে গত বছর পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ওমরাহ পালন করতে সৌদি গেছেন।

দেশে মেনিনজাইটিস টিকার চাহিদা খুবই কম। হজযাত্রী ছাড়া সরকারিভাবে এ টিকা দেওয়া হয় না; কিছু বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ফাইজারের তৈরি মেনিনজাইটিস টিকা আমদানি করে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস।

রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাদের কাছে মেনিনজাইটিস টিকার মোটা অঙ্কের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে চাহিদা অনুযায়ী আমরা এত দিন টিকা সরবরাহ করছিলাম। ওমরাহর জন্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিশেষভাবে ফাইজারকে বলেছি, আরও ১০ হাজার টিকা দিতে। প্রথম ধাপে ৫ হাজার টিকা পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাবে। আর ১০-১৫ দিন পর বাকি ৫ হাজার আসবে। দুই থেকে তিন মাস আগে যদি জানানো হতো, মেনিনজাইটিসের টিকা বেশি লাগবে, তাহলে আমরা সে ব্যবস্থা করতাম। হঠাৎ চাহিদা চলে আসায় ফাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা ১০ হাজার টিকা নিশ্চিত করেছি। প্রয়োজন হলে আরও টিকা আনার চেষ্টা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল মেনিনজাইটিস টিকা আগে কম নিত মানুষ। বছরে ৫-৬ হাজার আনতাম আমরা। টিকার দাম সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।’

ওমরাহযাত্রীদের টিকা নিতে হবে টাকা দিয়ে
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মঞ্জুরুল হক বলেন, ওমরাহযাত্রীদের মেনিনজাইটিস টিকা ব্যক্তি উদ্যোগে টাকা দিয়ে নিতে হবে। যারা হজ করতে যান, তাদের বাধ্যতামূলক এই টিকা নিতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের কাছে বিনামূল্যে সরবরাহ করে। মেনিনজাইটিস টিকা ব্যয়বহুল। 

নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যক্ষ ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, হজযাত্রীদের মেনিনজাইটিস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। নতুন করে ওমরাহযাত্রীদের ক্ষেত্রেও এ শর্ত প্রযোজ্য করেছে সৌদি সরকার। তাদের মেনিনজাইটিস টিকা কীভাবে দেওয়া হবে, এ সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ।