ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

যত্রতত্র যাত্রী তোলার দাবি

যথেচ্ছ আন্দোলন, সড়কে দুর্ভোগ

আমিরাতের নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি

যথেচ্ছ আন্দোলন, সড়কে দুর্ভোগ

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:৩৪ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৯:৩৬

আগের দিনগুলোর মতো গতকাল সোমবারও নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবিতে রাজধানীতে আন্দোলন করে শ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংগঠন বিভিন্ন দাবি নিয়ে সড়কে বসে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এখন থেকে কঠোর হবে বলে গতকাল রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর ফেসবুকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব। রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’

গতকাল সায়েদাবাদে বাস চালক-শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন আগের মতোই যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার দাবিতে। এতে জনপথ থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনাল পর্যন্ত সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা 
বন্ধ ছিল। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করার ঘটনায় দণ্ডিত হয়ে দেশে ফেরত আসা কর্মীরা ছয় দফা দাবিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে জড়ো হন। পরে তারা টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাদের দাবি, আমিরাতে পুনরায় প্রবেশে ‘নো-এন্ট্রি’ তুলে নিতে উদ্যোগ নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। 

বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিয়োগ পান নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা। পদ না থাকলে নিয়োগের সুযোগ নেই। প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা নিয়োগের দাবিতে শাহবাগে সড়কে অবস্থান নেন। রাতেও তারা ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের সামনে। এতে ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে গতকাল দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন উত্তীর্ণরা। যদিও হাইকোর্ট তাদের নিয়োগ বাতিল করে কোটার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে নতুন ফলাফল দিতে আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগে এ রায়ের পরিবর্তন ছাড়া নিয়োগ সম্ভব না হলেও সরকারের কাছেই সমাধান চান উত্তীর্ণরা। তাদের অবরোধে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে শাহবাগ মোড়। এতে আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজট হয়। নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাও যোগ দেন তাদের সঙ্গে। 

মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ চার দফা দাবিতে গতকালও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা সরেননি। তাদের দাবি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 

যত্রতত্র যাত্রী তুলতে সড়ক অবরোধ
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তিনটি রুটের বাসে ই-টিকিটিং ও কাউন্টার পদ্ধতি চালু করা হয়। এ পদ্ধতিতে গোলাপি রঙের বাস কাউন্টার থেকে শুধু টিকিটধারী যাত্রীকে তুলবে। সড়ক পরিবহন আইনেও যত্রতত্র যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ। এ নিয়ম ভঙ্গের সাজা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসে কারাদণ্ড রয়েছে। 

কিন্তু চালক, শ্রমিকরা আগের মতো যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ চান। তাদের ভাষ্য, এ সুযোগ না থাকায় আয় কমে গেছে। কাউন্টার মেনে চললে বেতন বাড়াতে হবে। এ 

দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শ্রমিকরা সায়েদাবাদ এলাকায় জড়ো হন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, যানজট নিরসন ও পরিবহন খাতে নৈরাজ্য রোধে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। নিয়ম মেনেই চলতে হবে।
 
বিনাখরচে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দাবি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে আমিরাতে বিক্ষোভ করে গত ২২ জুলাই থেকে পরের কয়েক দিনে গ্রেপ্তার হন ১৮৬ বাংলাদেশি। তাদের ৫৭ জনের তিন বছর কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সাজা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই কর্মীদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে জানিয়েছিল, তাদের মুক্তির জন্য কিছু করার নেই।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকেই কারাবন্দি কর্মীদের দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সিদ্ধান্ত হয়। আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অনুরোধে কারামুক্ত হয়ে ফেরেন দণ্ডিতসহ অন্যরা। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৮৬ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

তারা গতকাল টিঅ্যান্ডডি ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে। যারা বিদেশ যেতে চান, তাদের বিনাখরচে পাঠাতে হবে। যারা দেশে থাকতে চান, তাদের চাকরি দিতে হবে অন্যথা ব্যবসার জন্য বিনা সুদে ও জামানতে ঋণ দিতে হবে।

ঘণ্টাখানেকের বিক্ষোভের পর ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীদের একজন ছগির তালুকদার জানান, তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। আমিরাত সরকার সাজা মাফ করলেও ‘নো এন্ট্রি’ দিয়েছে। তাই দু্বাই ফিরতে পারছেন না। অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘নো এন্ট্রি’ তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০-১২ বছর আগে উত্তীর্ণরাও চান চাকরি
নিবন্ধন পরীক্ষায় ১০-১২ বছর আগে উত্তীর্ণরাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ১৭টি নিবন্ধন পরীক্ষা নিলেও মাত্র পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। এতে ১২-১৩ হাজার যোগ্য শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অনেকে একাধিক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি।

এসব আন্দোলনে গতকাল শাহবাগ, সায়েদাবাদ-সংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজট হয়। কাউন্টারভিত্তিক যাত্রী ওঠানামা বাতিলের দাবিতে অধিকাংশ গোলাপি বাস সড়কে নামাননি চালক, শ্রমিকরা। এতে  আব্দুল্লাহপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল এবং পল্টনে যান সংকটে নাকাল হন হাজার হাজার যাত্রী।

সড়কে না চললেও মেরুল বাড্ডা ও রামপুরা ব্রিজ এলাকায় শত শত বাস দাঁড়িয়ে ছিল। ভিক্টর বাসের চালক আবুল হাসেম বলেন, গোলাপি রং করতে গিয়ে অনেক বাসই নামেনি রাস্তায়। আর ই-টিকিটিংয়ে চালক-হেলপারের ক্ষতি হচ্ছে বলে অনেকে বাস চালাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন

×