ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, দুর্ভোগে রোগীরা
লংমার্চ টু হাইকোর্ট কর্মসূচি মঙ্গলবার

ম্যাটস, ডিএমএফ ইস্যুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের মানববন্ধন সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:২৫ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:৩২
পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
গতকাল রোববার রোগীর আত্মীয়স্বজনের সকাল শুরু হয় ভোগান্তি দিয়ে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন না, দেখা মেলেনি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদেরও। রোগীর স্বজনের ভাষ্য, হাসপাতালে সেবা বন্ধ করে আন্দোলনের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) সকাল থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়। এতে সেবাবঞ্চিত হন রোগীরা। সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বুকের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ৬০ বছর বয়সী আফজাল হোসেন। তাঁর বাড়ি সোনাতলার হরিপুর গ্রামে। রাতে ব্যথা ওঠার পর স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসায় শরীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে শজিমেকে আনা হয়। মেডিসিন বিভাগের বেলকনিতে রাখা হয় তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সেবা পাননি। তাঁর ছেলে মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে ভর্তি করার পর একবার নার্সরা দেখে গেছেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসক দেখেননি। কী কারণে বুকে ব্যথা, জানা যায়নি। এখন কী করব, চিন্তায় আছি।’
অন্যদিকে চিকিৎসক না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিতে দেখা যায় জোবেদা আক্তারকে। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আজ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা ছিল। কিছু করতে পারিনি। এমনকি সারাদিনে চিকিৎসকেরও দেখা মেলেনি।’ বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে যাচ্ছেন বলে জানান তাঁর স্বামী শাহাদৎ হোসেন।
শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘রোগী ভর্তি আছে ১ হাজার ৭৬৫। চিকিৎসক ২০০। প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি চিকিৎসক ডিউটিতে থাকেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই সেবা দিয়ে থাকেন। তারা আন্দোলনে যাওয়ায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে কর্মবিরতি শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেন। দুপুর ১টার দিকে মিছিল নিয়ে তারা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে যান। শিক্ষনবিশদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কলেজের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা। হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ২৫৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক। কর্মবিরতির কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে আসা রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
বিক্ষোভ করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা কলেজ সড়কে অবস্থান নেন। ৪০ মিনিটের মধ্যে ফের কর্মস্থলে চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ থেকে বাঁচেন রোগীরা।
বিক্ষোভ করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ চত্বরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেন।
দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
লং মার্চ টু হাইকোর্ট মঙ্গলবার
গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস। এর সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না। বিএমডিসির এই আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। গত ১৩ বছরে এই রিটের শুনানি ৯১ বার পেছানো হয়েছে। রায় দীর্ঘায়িত করে আইনের ফাঁক দিয়ে ‘ডাক্তার’ পদবি লেখার অভিপ্রায়ে আরও দুটি রিট করা হয়েছে। আমরা এই রায়ের দীর্ঘসূত্রতা চাই না। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে লং মার্চ টু হাইকোর্ট কর্মসূচি পালন করা হবে। এর পরও যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে– ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগের (ওটিসি) তালিকা হালনাগাদ, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ফার্মেসিকে ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো ওষুধ বেচতে না দেওয়া, ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ, নিয়োগে চিকিৎসকের বয়সসীমা ৩৪, ম্যাটস ও মানহীন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ এবং দ্রুত চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিনিধিরা)
- বিষয় :
- ইন্টার্ন চিকিৎসক