বাণিজ্য
বিশ্বকে বদলে দেওয়া শিপিং কনটেইনার

১৯৫৬ সালে নির্দিষ্ট মাপের কনটেইনার পরিবহনে ট্যাঙ্কার ব্যবহার শুরু হয়। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর থেকে কনটেইনার নিয়ে যাত্রা করে একটি ট্যাঙ্কার - সংগৃহীত
শিহাবুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:১২ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ১০:২০
বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহনে জনপ্রিয় মাধ্যম শিপিং কনটেইনার। বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবহন করা হয় সমুদ্রপথে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই কনটেইনারে সম্পন্ন হয়। বাকি ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল, গ্যাস ও শস্যের মতো পণ্য আলাদা প্রক্রিয়ায় পরিবহন করা হয়। বার্ষিক প্রায় ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য ৪০ বা ২০ ফুটের এই ধাতব বাক্সে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করে। আজকের দিনে বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ স্তম্ভ পঞ্চাশের দশকেও চিন্তার বাইরে ছিল।
বাণিজ্যের সূচনালগ্ন থেকেই দীর্ঘ দূরত্বে পণ্য পরিবহনে বাক্স, বস্তা, ব্যারেল ও বিভিন্ন আকারের কনটেইনার ব্যবহৃত হতো। সে সময় পণ্য বোঝাই ও খালাস কার্যক্রম প্রক্রিয়াটি শ্রমনিবিড়, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল। তখন জাহাজ থেকে রেলগাড়িতে স্থানান্তর করতে পণ্য খালাস এবং পুনরায় বোঝাই করতে হতো।
কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের শুরুটা হয় মূলত অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের কয়লা খনি অঞ্চলে। জেমস ব্রিন্ডলি নামে এক ব্রিটিশ প্রকৌশলী ১৭৬৬ সালে কয়লা পরিবহনে একটি নৌকার নকশা করেছিলেন। ৩০ বছর পর আরেক ইংরেজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বেঞ্জামিন আউট্রামের উদ্ভাবনকে অনেক ইতিহাসবিদ প্রথম কনটেইনার বলে মনে করেন। তাঁর কনটেইনারে খনি থেকে কয়লা নিয়ে রেলপথ ধরে খাল, এর পর নৌকায় আবার ঘোড়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পরিবহন করা হতো।
১৯৫০-এর দশকে মার্কিন উদ্যোক্তা ম্যালকম ম্যাকলিন উপলব্ধি করেন, কনটেইনারের আকার নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে জাহাজ ও ট্রেনে মালপত্র বোঝাই এবং খালাস আংশিক যান্ত্রিকীকরণ করা যেতে পারে। তাঁর আবিষ্কৃত কনটেইনার প্রায় ১১ মিটার লম্বা ছিল। এর পর ম্যাকলিনের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল এই কনটেইনার বহনে সক্ষম জাহাজের ব্যবস্থা করা। এ জন্য তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি টি২ ট্যাংকার কিনে সেগুলো এই কনটেইনার বহনের উপযোগী করে তোলেন।
এর পরই আসে কনটেইনার শিপিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। ১৯৫৬ সালে প্যান-আটলান্টিক স্টিমশিপ আন্তঃমার্কিন রুটে কনটেইনার পরিবহনে আইডিয়াল এক্স নামে একটি ট্যাংকার ব্যবহার শুরু করে। আইডিয়াল এক্সের সফলতার পর তিনি গেটওয়ে সিটি নামে একটি জাহাজের ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন। এটিই ছিল কনটেইনার পরিবহনের জন্য ডিজাইন করা বিশ্বের প্রথম জাহাজ।
১৯৬৬ সালের মধ্যে কনটেইনারগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে আদর্শ কনটেইনারের আকার হলো ২০ ফুট লম্বা, ৮ ফুট চওড়া ও ৯ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। এটির ১০ ও ৪০ ফুট লম্বা সংস্করণও আছে। মূল সুবিধা হলো, জাহাজ, ট্রেন বা ট্রাকে যেখানেই কনটেইনারগুলো পরিবহন করা হোক না কেন, সেগুলো ফিট হয়ে যায়। এ আবিষ্কার বাণিজ্য তথা পুরো বিশ্বকেই বদলে দেয়। তথ্যসূত্র: অ্যামাজন ডটকম।