মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটে জড়িত শেখ রেহানা-সালমানসহ প্রভাবশালীরা

ছবি- সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ২২:১৮
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন।
সোমবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া স্মারকলিপিতে এ অভিযোগ করেছেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, অতীতের মতো যেন আর সিন্ডিকেট না হয়। সিন্ডিকেট ভাঙতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধন করতে হবে।
সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিতে স্মারকলিপিটি প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়াকে দেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সিন্ডিকেট ভাঙলে মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও, আবারও সিন্ডিকেট করার পায়তারা চলছে।
সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া মালয়েশিয়ার বাছাই করা ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে অতীতের অনিয়ম হলেও, ২০২১ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার একই পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে রাজি হয়। ২০২২ সালে প্রথমে ২৫ এজেন্সি এবং পরবর্তীতে তিন ধাপে আরও ৭৬ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর কাজ পায়। এগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিত।
প্রথম ২৫ এজেন্সিতে ছিল তৎকালীন মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দুই এজেন্সি। ছিল আওয়ামী লীগ এমপি বেনজির আহমেদ, আলাউদ্দিন নাসিম, জাতীয় পার্টির মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর তিন প্রতিষ্ঠান। বাকি ২০টির অন্তত আটটি আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানাধীন।
৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও, সিন্ডিকেট নামে পরিচিত এজেন্সিগুলো কর্মী প্রতি গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, অতীতে কর্মী হয়রানীর নজির থাকার পরও শেখ রেহানা, সালমান এফ রহমানসহ প্রভাবশালীদের যোগসাজশে দ্বিতীয়বারের সিন্ডিকেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী নিয়োগের ‘ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এফডব্লিওসিএমএস’র নিয়ন্ত্রক ছিল বেস্টিনেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর অন্যতম মালিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিনুল ইসলাম নুর। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিসের মালিক রুহুল আমিন স্বপন।
গত বছরের মে মাসে সমকালের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এফডব্লিওসিএমএসে কর্মীর নিবন্ধন ফি ১০০ রিঙ্গিত হলেও, টাকা পরিশোধে ‘মাইগ্রাম’র ভার্চুয়াল রিচার্জ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত করে নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটে ঢুকতেও আগাম ঘুষও দিতে হয়েছিল এজেন্সিগুলোকে। প্রতি কর্মী নিয়ন্ত্রণের সময়ে ‘ঘুষের ব্যালেন্স’ থেকে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত করে কাটা হতো। আবার অটো রোটেশন পদ্ধতির কারণে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী পাঠিয়ে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। কর্মী প্রতি এক লাখ ৫২ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতেও একই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, যখনই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই ওই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর পলাতক রুহুল আমিন স্বপন এবং আমিনুল ইসলাম নুর আবারও সিন্ডিকেট গড়তে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। তাদের কারণে ২০২৪ সালে বহির্গমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি।
জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী মালয়েশিয়া গিয়ে চাকরি ও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সিন্ডিকেট নির্মূলে মালয়েশিয়া অন্যান্য কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে যেভাবে এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেয়, বাংলাদেশ থেকেও সেভাবে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। মালয়েশিয়ার সরকারের পরিবর্তে নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করবে।
৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের স্বাক্ষরসহ রয়েছে স্মারকলিপিতে। তাদের পক্ষে স্মারকলিপি জমা দেন বায়রার সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
- বিষয় :
- মালয়েশিয়া