ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বজ্রপাত

বিষাদে ভরে গেল আনন্দের পথ

দুই ছাত্রীর মৃত্যু, গুরুতর আহত এক ছাত্রী হাসপাতালে

বিষাদে ভরে গেল আনন্দের পথ

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ | ০৯:৫০

নবম শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া জান্নাত ইরিনা, আদ্রিতা ইসলাম প্রিয়া ও ইমা আক্তার বর্ষা। বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে তাদের বিদ্যালয়। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করে তারা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হেঁটে বিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে তিন বান্ধবী। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই ফারিয়া ও আদ্রিতা প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে ইমা।

মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকী গ্রামে। মৃত ফারিয়া ওই গ্রামের জালাল উদ্দিনের এবং আদ্রিতা বাদল মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমা। তার বাবার নাম বোরহান উদ্দিন। তিনজনই চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই শিশুর এমন মৃত্যুতে শোকে কাতর গ্রামবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আহত ইমা ও এলাকাবাসী জানায়, চরটেকী গার্লস স্কুলের ছাত্রীরা বাইসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করে। এ কারণে বিদ্যালয়টি ‘বাইসাইকেল স্কুল’ নামে পরিচিত। গতকাল দুপুর ১টা থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের প্রথম পত্রের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে সাড়ে ১২টার দিকে হেঁটে বাড়ি থেকে রওনা দেয় ফারিয়া, আদ্রিতা ও ইমা। পথে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতের আঘাতে অচেতন হয়ে পড়ে তারা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ফারিয়া ও আদ্রিতাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ইমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাজরিনা তৈয়ব জানান, ইমা আপাতত শঙ্কামুক্ত। তার বুকের বাঁ পাশে পোড়া দাগের মতো হয়ে আছে।

চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অসচ্ছল পরিবারের মেয়েগুলো কষ্ট করে লেখাপড়া করছিল। অসময়ে দুটি শিশু মারা গেল। তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়।’

জেনারেল হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর শয্যায় ইমার শরীরে স্যালাইন চলছে। পাশে তার বাবা বোরহান উদ্দিন, মা রিনা আক্তার, বড় বোন সুবর্ণা আক্তারসহ অন্য স্বজনরা বসে আছেন। অস্ফুট স্বরে ইমা জানায়, তার খুব কষ্ট হচ্ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে। তার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মেয়েগুলো প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। গতকাল হেঁটে রওনা দেয়। সাইকেলে গেলে হয়তো এত বড় অঘটন ঘটত না।’

ঘটনার পর খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান পাকুন্দিয়ার ইউএনও বিল্লাল হোসেন। দুই শিশুর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মিঠামইন উপজেলায় বজ্রপাতে কডু মিয়া (৪০) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কডু মিয়া ওই গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে। মিঠামইন থানার ওসি শফিউল আলম জানান, দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ির পাশে খোলা মাঠে শুকনো খড়ের গাদা তৈরি করছিলেন কডু। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে প্রাণ হারান তিনি।

আরও তিন কৃষকের মৃত্যু
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বজ্রপাতে ওলিয়ার রহমান (৫০) ও মিরাজুল মণ্ডল (২৩) নামে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মহারাজপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর ও গান্না ইউনিয়নের পশ্চিম বিষয়খালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, দুপুরে মাঠে ধান বাঁধতে যান মিরাজুল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে আহত হন মিরাজুল। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এদিন দুপুরে বিষয়খালী গ্রামে মাঠ থেকে ঘাস নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ওলিয়ার। পথে বজ্রপাতে প্রাণ হারান তিনি।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সদর ইউনিয়নের বাশকার হাওরে এ ঘটনা ঘটে। জাকির পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মালিক উস্তারের ছেলে।

এদিকে বজ্রপাতে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে মেহগনি গাছ ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। গতকাল সকালে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সামনের একটি গাছে এ ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। খবর পেয়ে গাছটি দেখতে ভিড় করেন এলাকাবাসী।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

আরও পড়ুন

×