ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

উদ্ভিদ

অসময়ে দেখা আমলকী

অসময়ে দেখা আমলকী

চট্টগ্রামের খুলশীতে গ্রীষ্মে দেখা আমলকী -লেখক

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫ | ০০:৫৪ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ | ০৭:০০

প্রকৃতিতে রোজ চলে পালাবদলের খেলা। কি আকাশে, কি বাতাসে, কি গাছে! ভালো করে খেয়াল করলে পালাবদলের ব্যাপারটা চোখে পড়ে। শীত এলে অনেক গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে। কবির ভাষায়– ‘উড়িয়ে দেবার মাতন এসে কাঙাল তারে করল শেষে।’ হিমালয় থেকে উড়ে আসা হিমেল বাতাস উড়ে এসে কাঁপন ধরিয়ে দেয় গাছপালায়। সব গাছপালা কাবু না হলেও আমলকীকে শীত একেবারে কাঙাল করে দেয়। শীতের দিনে আমলকীর সে অবস্থাটা ঠিক বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; লিখেছিলেন– ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে...।’ শীত শেষে বসন্তে আমলকীর সেসব রিক্ত ডালপালায় উন্মেষ ঘটে নবপত্রপল্লবের। তারপর ফুল থেকে ফল; শরত-হেমন্তে গিয়ে আমরা পরিপক্ব ফলের দেখা পাই। 

কিন্তু কী আশ্চর্য! যে সময় আমলকী গাছে ফুল হওয়ার কথা, সে সময়ই গাছভরা ফল দেখতে পেলাম চট্টগ্রামের খুলশীর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে। একটি গাছে দেখলাম, থোকায় থোকায় পরিপক্ব আমলকী ঝুলছে। ফলগুলো বেশ বড়। আমাদের দেশি জাতের আমলকীর আকার কাচের মার্বেলের মতো। এগুলোর আকার মার্বেলের চেয়ে বড়, আকর্ষণীয় টসটসে চেহারা। সঙ্গে ছিলেন সে কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মনিরুজ্জামান বাদল। বললেন, বছর পাঁচেক হলো গাছটি লাগানো হয়েছে গবেষণার জন্য। দেখা গেছে, গাছে গ্রীষ্ম ও শরতে দুই দফায় ফল ধরে। যদি এর ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য কাঙ্ক্ষিত হয়, তাহলে নতুন জাত হিসেবে এটি অবমুক্ত করা হবে। 

মনিরুজ্জামান বাদল জানান, আমাদের দেশি জাতের আমলকী বছরে একবার ফল দেয় এবং স্বাদে কইষট্যা টক-তিতকো, আকারে ছোট, কম মাংসল। সেখানে এ জাতের আমলকীর আকার বড়, কম কইষট্যা ও মাংসল। এটি জাত হিসেবে অনুমোদিত ও চাষ সম্প্রসারিত হলে অসময়েও দেশে বড় বড় আমলকী পাওয়া যাবে। 
জানা গেল, লাল রঙের একটি আমলকী নিয়েও সেখানে গবেষণা চলছে। এ দেশে অনেক আগে থেকে আমলকী গাছ রয়েছে। দেশি জাতের সেসব আমলকী অনেকটা বন্য স্বভাবের ও প্রচুর ধরে। সাধারণত ত্রিফলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হিসেবে আমলকীকে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারি আমলকী ১’ নামে একটি আধুনিক জাত অবমুক্ত করেছিল। সে জাতের গাছেও জ্যৈষ্ঠ ও অগ্রহায়ণে ফল পাওয়া যায়।

আমলকী আমাদের দেশীয় গাছ। এর অনেক নাম। এলাকাভেদে আমলতি, আমলা, আউলা ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম আমলা বা ইন্ডিয়ান গুজবেরি। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Phyllanthus emblica, গোত্র ফাইলেনথেসি। এটি বহুবর্ষজীবী পাতাঝরা স্বভাবের বৃক্ষ। বাকল গিঁটযুক্ত ও ছিটছিট দাগযুক্ত। পত্রদণ্ডের দু’পাশে লজ্জাবতী গাছের মতো ছোট ছোট অনেক পত্রক সাজানো। ফুল খুব ছোট, গোলাকার, খোসা মসৃণ ও হালকা শির বা রেখাযুক্ত। বুনো আমলকীগুলো ছোট। চাষ করা এই আধুনিক জাতের আমলকীর ওজন বন্য জাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ। পুষ্টিও অনেক। একটা কমলার চেয়ে একটি আমলকীতে প্রায় ২০ গুণ ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টিমূল্য ও উপকারিতার জন্য আয়ুর্বেদাচার্যরা এর নাম দিয়েছেন অমৃতফলা। 

আরও পড়ুন

×