সংস্কার-নির্বাচনের জন্য দুটি পথনকশা চায় জামায়াত

ডা. শফিকুর রহমান
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫ | ০১:৩৩ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ | ১০:২২
অর্থবহ সংস্কার এবং নির্বাচনের জন্য দুটি পৃথক পথনকশা চায় জামায়াতে ইসলামী। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দলটি এ দাবি জানিয়েছে।
সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনায় বৈঠকের পর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি হতে হবে। সংস্কার না হলে, নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
বৈঠকে ড. ইউনূস কী বলেছেন– প্রশ্নে জামায়াত
আমির বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অর্থবহ স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চান। যেনতেন নির্বাচন করতে চান না। সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি একটি সিদ্ধান্ত দেবেন।
নির্বাচন-সংস্কার নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদত্যাগের আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের কাজে বাধা, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা, দাবি আদায়ে সড়ক বন্ধ করে সরকারকে জিম্মি করায় দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলেন।
এর ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপির পর জামায়াত আমির এবং নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বৈঠক করেন সরকারপ্রধানের সঙ্গে।
শফিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। গত পরশু প্রধান উপদেষ্টা একটি বার্তা (পদত্যাগ) দিতে চেয়েছিলেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-বিরক্ত ছিলেন।
অন্যান্য দল প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন করলেও বিএনপির তরফে বক্তব্য আসে, আবেগের বশে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে জনগণ বিকল্প খুঁজে নেবে। তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে দলটি। জামায়াত আমির বলেন, তাঁর দল কারও পদত্যাগ দাবি করেনি।
সরকারে যারা রয়েছে, তারা কোনো দলকে ধারণ করবেন না। এটা হওয়া উচিত। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে। এটাও সমাজকে উদ্বিগ্ন করেছে। শফিকুর রহমান বলেন, ‘অর্থবহ কিছু সংস্কার এবং বিচার হতে হবে।
এর মাধ্যমে অর্থবহ নির্বাচন হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কাউকে ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। পেশাশক্তি, কালো টাকার ব্যবহার থাকবে না। এটাই মানুষের দাবি।’
পথনকশার বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট পথনকশা দেননি। কোনো মাস বলেননি। জামায়াতের কিছু সুপারিশ ছিল। দুটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা দিয়েছেন, এর মধ্যেই সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন হওয়া উচিত। সব সংস্কার এ সরকার করতে পারবে না। যে পাঁচ সংস্কারে সরকার হাত দিয়েছে, তা নিষ্পত্তি হতে হবে। সবাই সহযোগিতা করলে, অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন নিশ্চিত হতে পারে। যে অস্থিরতা দেখা দিয়ছিল, সংস্কার এবং নির্বাচনের দুটি পথনকশা ঘোষণা করলে অনেকটা সমাধান হবে।
প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, সংস্কারের পর সবাই নির্বাচন চায়। বিএনপিও বলছে, তারা সংস্কারের বিরোধী নয়। তারা বলেছে, পথনকশা চায়। এটা তো জামায়াতও চায়। তবে জামায়াত সময় বেঁধে দেয়নি।
আগের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে শফিকুর রহমান বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে। সংস্কারের জন্য আরেকটু সময় লাগলে, রোজার পর নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে বিলম্বিত হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে না।
নির্বাচনের দিনক্ষণ চায় জামায়াত
এর আগে দলের মজলিসে শূরার বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সভায় আলোচনা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যে সময়েই নির্বাচন হোক, জামায়াতের আপত্তি নেই। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের উচিত কোন মাসে নির্বাচন হবে, তা স্পষ্ট করা। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রায় ৪০০ সদস্যের শূরার সভায় আগামী নির্বাচন, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৯৮ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম বিচ্ছিন্নভাবে ঘোষণা করেছে জামায়াত। শূরা সদস্যরা নির্বাচনী জোট সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ্ মিলনায়তনে জামায়াত আমিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ ষাণ্মাসিক সভায় সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, দেশে সেনাবাহিনীর মর্যাদাপূর্ণ অবদান রয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করলে স্বাধীন দেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। কারও কোনো কার্যক্রম বা পদক্ষেপে সেনাবাহিনী বিতর্কিত হোক, তা চাই না। সেনাবাহিনীকে নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে জাতি আবার গভীর সংকটে পড়বে। তাই নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
দলের নেতাদের সতর্ক করে শফিকুর রহমান বলেন, এমন কোনো রুটি-রোজগারে জড়িয়ে না পড়ি, যাতে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতে হবে।
মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দরকে স্পর্শকাতর বিষয় আখ্যা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
- বিষয় :
- ডা. শফিকুর রহমান