লন্ডনে দুই বাংলাদেশির ১৪৭৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫ | ০১:৪০ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ | ০৭:২৬
লন্ডনে ৯ কোটি পাউন্ডের (প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ (ফ্রিজ) করেছে যুক্তরাজ্য। এগুলোর মালিক আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তাঁর চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান। শায়ান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সম্পদ জব্দের মোট ৯টি আদেশ পেয়েছে। সরকারি নথিপত্রে ঘেঁটে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
জব্দের আদেশ অনুযায়ী, শায়ান ও শাহরিয়ার লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। এর মধ্যে গ্রোসভেনর স্কয়ারের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ নিয়ে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে এই দু’জনের নাম রয়েছে।
এসব সম্পদ ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, আইল অব ম্যান বা জার্সিতে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা। প্রায় ১২ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা) থেকে শুরু করে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডের (প্রায় ৫৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা) মধ্যে একেকটি সম্পদ কেনা।
গত বছর গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) যৌথ অনুসন্ধানে শায়ান ও শাহরিয়ারের নামে থাকা সম্পদের তথ্য উঠে আসে। এতে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পদের কথা জানা যায়। এনসিএর জব্দ করা সম্পদের মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্সের আলোচিত অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা গ্রেশাম গার্ডেন্সের ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ ও বর্তমান সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের মা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ৭৭ লাখ পাউন্ডে (প্রায় ১২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা) কেনা দুটি সম্পদ জব্দের বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের নীতিবিষয়ক পরিচালক ডানকান হামেস বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালিয়ে যেতে এবং দেরি না করে সব সন্দেহভাজন সম্পদ জব্দ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে এনসিএর মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি, চলমান সিভিল (দেওয়ানি) তদন্তের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্পদ জব্দের আদেশ পেয়েছে এনসিএ।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অপরাধ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এর জেরে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযোগের মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ ছেড়েছেন টিউলিপ। যদিও তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমান ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো গ্রুপের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে গার্ডিয়ান। শায়ান এফ রহমানের একজন মুখপাত্র এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘আমাদের মক্কেল যে কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তিনি অবশ্যই তাতে সহযোগিতা করবেন।’ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। বিষয়টি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি।’
চাপ তৈরি হওয়ায় লন্ডনে সম্পদ জব্দ: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, চাপের কারণে লন্ডনে সম্পদ জব্দ হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ঋণ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, আলজাজিরাসহ বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের অর্থ পাচার নিয়ে বড় বড় নিবন্ধ লিখছে। ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা সমর্থন দিচ্ছেন। এর বাইরে ব্রিটিশ এনজিও যারা আছে, তারাও এটাকে সমর্থন করছে। ফলে আমি মনে করি, একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই চাপের ফলে আজ আমরা দেখলাম যে এনসিএ কিছু সম্পদ জব্দ করেছে।’
জব্দ হওয়া সম্পদ কতদিনের মধ্যে দেশে ফেরত আসতে পারে– জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটি আসবে বিচারের পর।’
অন্যান্য দেশে এ ধরনের সম্পদ থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে গভর্নর বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। গত সপ্তাহে দুবাই গিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। লন্ডনে আবার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ পাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপকে টিআইবির সাধুবাদ
যুক্তরাজ্যে পাচার সম্পদের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রথম পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সংস্থাটির পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ অনুসরণ করে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত, জব্দ এবং পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই জব্দ হওয়া অর্থসম্পদ হিমশৈলের চূড়ামাত্র। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই) বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থসম্পদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আমরা এসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানাই– তারা যেন যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ অনুসরণ করেন।’
- বিষয় :
- সম্পদ