জন্মবার্ষিকী
নজরুলের কাছে ঐক্য ধরে রাখার শিক্ষা পাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবির সমাধিতে রোববার পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন পরিবারের সদস্যরা সমকাল
সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫ | ০১:১১ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ | ০৫:৪০
সাম্য ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তাঁর পরিবারের সদস্য, নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় নজরুলবিষয়ক বিশেষ সেমিনার। প্রতিবারের মতো এবারও ছায়ানট আয়োজন করে নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ ‘নজরুল উৎসব’।
ছায়ানটে নজরুল উৎসবের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের স্বল্প সময়ের সৃষ্টিশীল জীবনের মধ্যে যে বিপুল বৈচিত্র্য, তা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করেছে। নজরুল সাহিত্য ও সংগীতের নানা ধারায় অবদান রাখলেও তাঁর সর্বাধিক সার্থক প্রকাশ ঘটেছে গানে।’ নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনায় স্মরণ করা হয় নজরুলকে।
বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নজরুলবিষয়ক বিশেষ সেমিনার হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। ‘নন্দনের বাঁশরী ও তূর্য অথবা নজরুলের সাহিত্যচিন্তার কয়েক দিক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি সা’দত কলেজ ও টাঙ্গাইলের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জগলুল আসাদ। আলোচক ছিলেন বাঙ্গালা গবেষণা সংগঠনের পরিচালক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক আফজালুল বাসার। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। সেমিনারে বক্তারা বলেন, নজরুল শুধু কবি নন, তিনি আমাদের জাতীয় চেতনার মশাল। ব্যক্তিগত জীবন থেকে উঠে আসা তাঁর কবিতা ও গান বাঙালির সংগ্রাম, স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এরপর দেওয়া হয় নজরুল পুরস্কার-২০২৫। এ বছর নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং নজরুলসংগীত চর্চায় শিল্পী শবনম মুশতারীকে পুরস্কৃত করে বাংলা একাডেমি।
এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন। পরে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন তারা। এরপর সমাধি প্রাঙ্গণে স্মরণসভায় অংশ নেন উপাচার্য।
এ ছাড়া কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বিএনপিসহ নানা সংগঠন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা এ দিন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। জাতীয় কবিকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর নাতনি খিলখিল কাজীসহ পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্যরাও। শ্রদ্ধা জানিয়ে খিলখিল কাজী বলেন, ‘কাজী নজরুল শিখিয়ে গেছেন, সবসময় সত্যের পক্ষে থাকব, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলব। এগুলো পালন করতে পারলে তা হবে আমাদের সার্থকতা।’
নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। আরও বক্তব্য দেন কালচারাল সেন্টারের পরিচালক অ্যান মেরি জর্জ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুজিত মুস্তাফা ও জুলি শারমিন শারমেলী।
- বিষয় :
- নজরুল উৎসব