এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫ | ১৭:২৯ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ | ১৭:৫৩
দীর্ঘ সময় ধরে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্থ সংকট ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা জটিলতায় এই অর্থ প্রাপ্তির অপেক্ষা আরও বেড়েছে। অবসর ও কল্যাণ সুবিধা মিলিয়ে ৮৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। এসব আবেদনের বিপরীতে টাকা দেওয়ার জন্য বোর্ডে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। আর এই সংকট কমাতে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দে সম্মতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি সম্মতিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ২০০০ কোটি টাকা (বন্ড হিসেবে) এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ২০০ কোটি টাকা (অনুদান হিসেবে) বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে অবসর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীনে ‘১৩৫০০৩৪০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ এর অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০০ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ১০৯০১০১-১২০০০১০০০৫৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি আপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।
শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান ৬ অনুযায়ী অধিক আলোর লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাবে প্রদত্ত ২০০০ কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে; (খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ (এক) সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘স্থায়ী তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘চলতি তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”
অন্যদিকে শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ১৩৫০০৩৫০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০ কোটি টাকা টাকা অর্থ বিভাগের ‘১০৯০১০১-১২০০০১০০০-৩৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।
শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান ৭ এ বর্ণিত ‘মূলধন তহবিল” হিসাবে কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে প্রদত্ত ২০০.০০ (দুইশত) কোটি টাকা অধিক আয়ের লক্ষ্যে সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে;
(খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘মূলধন তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘মূলধন তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘সাধারণ তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”
অবসর-সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর থেকে মাসে আয় হয় পাঁচ কোটি টাকা। এই খাতে মাসে আয় হয় ৮০ কোটি টাকা, যা বছরে ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু অবসর-সুবিধার জন্য মাসে প্রয়োজন হয় ১২০ ও বছরে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে ঘাটতি ৪৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন এখন নিষ্পত্তি করতে হলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলে কাউকে আর অবসর-সুবিধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থে পরিচালিত সরকারের আর্থিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য এককালীন তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতি বছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
- বিষয় :
- বেসরকারি কলেজশিক্ষক
- অর্থ বরাদ্দ
- অবসর