আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত ১৯ গ্রাম
বৃষ্টি-ঝড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫৩ স্থানে ভূমিধস, মৃত্যু ১
কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি

উজানের পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। থমকে গেছে জীবনযাত্রা। দোকানপাটে পানি ঢোকায় ব্যবসা-বাণিজ্যও তেমন হচ্ছে না। সোমবার বঙ্গেরচর এলাকা থেকে তোলা ফোকাস বাংলা
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ০১:২৩ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ | ০৯:২৫
টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মাটির দেয়ালধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ১১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি বাড়িঘর। সোমবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিনিধি জুলিয়েট মুরেকেইসনি বলেন, খাড়া ঢালু জায়গা, বন্যা এবং অস্থায়ী আশ্রয় মিলিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝোড়ো হাওয়া বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঘরগুলোকে আরও দুর্বল করে তুলছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে এবং কমিউনাল সেন্টারগুলোতে স্থানান্তরে শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করছেন। কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আরও জায়গা দরকার।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশপাশের বাংলাদেশিরা একইভাবে এমন একটি এলাকায় বাস করছেন, যেখানে বন্যা, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি সবসময় থাকে। সাধারণত মে মাসের আগেই বর্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু এ বছর অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন। এর মধ্যে গতকাল ভোরে উখিয়ার ক্যাম্প-২ ইস্টে মাটির দেয়াল ধসে মোহাম্মদ আয়াস নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দু’জন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু পরিবার পানিবন্দি। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবার সেন্টমার্টিনে পণ্যবাহী ট্রলার যেতে পারেনি।
আখাউড়ায় প্লাবিত ১৯ গ্রাম
টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষ। রপ্তানিকারকদের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি জমেছে। আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার বলেন, ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে পানি ঢুকছে। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম স্বাভাবিক।
গত ২৮ মে সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ও ঢলের তীব্রতায় মোগড়া, মনিয়ন্দ ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানি ওঠে। রাতে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় বহু মানুষ। অনেকেই নিজের মালপত্র রক্ষা করতে না পারায় ঘরবাড়ি ও খামারে ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান জানান, সকালে ত্রিপুরার হাওড়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। সেই পানি বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে।
কুশিয়ারা নদীর বাঁধে ভাঙন
টানা বৃষ্টি ও ভারতের বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা ঢলে সিলেট সীমান্তের জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। দ্রুত পানি ঢুকছে লোকালয়ে।
অন্যদিকে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সকালে জকিগঞ্জ পৌর শহরের কিছু এলাকায় পানি ওঠে। কুশিয়ারার তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। একই অবস্থা ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের কিছু এলাকার।
মৌলভীবাজারে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। সদর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের পাশে নদী তীরবর্তী সড়ক মাড়িয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। এ ছাড়া জুড়ী নদীর ভবানীপুর পয়েন্টে, মনু নদের চাঁদনীঘাট ও মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
মানিকছড়িতে পাহাড়-সড়ক ধস
টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার দুপুরে ছুদুরখীল সড়কের বড়বিল ও তুলাবিলের মাঝামাঝি একটি কালভার্টের নিচের অংশের মাটি সরে যায়। রাতেই পুরো কালভার্ট দেবে যায়। উপজেলার ডাইনছড়ি বাজারসংলগ্ন বাটনাতলী-মানিকছড়ি সড়ক ধসে গেছে।
শেরপুরে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সকালে ধানশাইল ইউনিয়নের সোমেশ্বরী নদীর পানি উপচে চাপাতলী সেতুর দুই দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম ও সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিকেলে নালিতাবাড়ীর চেল্লা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা)