বর্ষা উৎসব
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় ছায়ানটে সুর, শ্রুতিতে মগ্নতা

রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় ‘বর্ষা উৎসব’। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ | ০৮:৪৭
আষাঢ়ের অন্ধকার নেমে এসেছিল শহরের গায়ে। বৃষ্টির নরম পর্দা যেন ঢেকে দেয় জীবনের কোলাহল। এমনই এক বর্ষণমুখর দিনে ছায়ানট মিলনায়তনে জমে উঠেছিল এক অনুপম গীতিসন্ধ্যা। যেখানে সুর, রাগ ও অনুভবে মগ্ন হন দর্শক। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহীয়সী নারী সুফিয়া কামালকে নিবেদন করা হয় বহুমাত্রিক এ আয়োজন।
রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় ‘বর্ষা উৎসব’। বাইরে বৃষ্টির ছন্দ আর ভেতরে সংগীতের অনুরণন– এমনই এক সুবাসিত সন্ধ্যা পরিণত হয়েছিল বর্ষা ঋতুর প্রতি এক নান্দনিক শ্রদ্ধা নিবেদনে।
অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ইফফাত আরা দেওয়ান। তাঁর কণ্ঠে ভেসে আসে ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’। এই গান দিয়ে শুধু একটি পরিবেশনার সূচনা নয়, বরং বর্ষার আবহ, প্রেমের প্রতীক্ষা আর প্রকৃতির রহস্যময়তার দরজা খুলে যায়।
এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সংগীতশিল্পীরা। উষসী নাগ পরিবেশন করেন রাগ শুদ্ধসারং, যার প্রতিটি স্বরে মিশে থাকে মন ভোলানো বারিধারার মায়া। শ্রাবন্তী ধর গাইলেন ‘ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া’– সেই চিরচেনা ঋতুভার অনুভব, যা শ্রোতার মনেও এনে দেয় অনাবিল স্নিগ্ধতা।
সুদীপ্ত শেখর দে রাগ ‘দেশ’ পরিবেশন করেন। সত্যম কুমার দেবনাথের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘এসো শ্যামল সুন্দর’– আধ্যাত্মিক আবাহন আর রাগভিত্তিক গানের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় এক ধ্যানমগ্ন মুহূর্ত।
পরিবেশনায় আরও ছিলেন স্বপ্না সাহা (রাগ ছায়ানট), সেঁজুতি বড়ুয়া (গোধূলি গগনে মেঘে), সিরাজুম মুনীরা (রাগ কেদার), নুসরাত জাহান রুনা (বহু যুগের ওপার হতে)– যাদের সুরে বর্ষা শুধু আবহ নয়, হয়ে ওঠে এক অন্তর্লীন মানসপট।
প্রিয়ন্তু দেব গেয়ে শোনান ‘মেঘ মেদুর বরষায়’, সমুদ্র শুভম পরিবেশন করেন রাগ জয়জয়ন্তী– সন্ধ্যা তখন পূর্ণতায়। তাহমিদ ওয়াসিফ ঋভুর ‘আমার দিন ফুরালো’, রিফাত আহমেদ ইমনের ‘দেশমল্লার’ এবং মিনহাজুল হাসান ইমনের ‘রামদাসীমল্লার’– এই ধারাবাহিকতায় শ্রোতারা যেন হারিয়ে যান সুরালোকে।
দ্বিতীয় অংশে মানীষ সরকার গেয়ে শোনান ‘ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা’, ফারজানা আক্তার পপির কণ্ঠে বাজে ‘ঝরঝর বরিষে বারিধারা’, আর আফরোজা রূপা পরিবেশন করেন ‘মেঘমল্লার’– বর্ষার সংগীতযাত্রা সেখানে এক ধ্বনিময় সংলাপে রূপ নেয়।
শেষ মুহূর্তগুলোতে সুস্মিতা দেবনাথ সুচির ‘বরষা ওই এলো বরষা’, অনন্যা আচার্যের ‘মিয়াকিমল্লার’ এবং শারমিন সাথী ইসলাম ময়নার ‘চঞ্চল শ্যামলে এলো গগনে’– এই ত্রয়ী পরিবেশনায় শ্রোতা যেন দাঁড়িয়ে থাকে গানের শেষ বৃষ্টিবিন্দু গায়ে মেখে।
সন্ধ্যার উপসংহার হিসেবে পরিবেশিত হয় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, তাতে উদ্ভাসিত হয় গভীর ও গর্বিত এক মুহূর্ত।
যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন গৌতম সরকার, ইফতেখার আলম ডলার, আশিকুল ইসলাম আবীর, শৌনক দেবনাথ ঋক ও প্রদীপ কুমার রায়।
- বিষয় :
- উৎসব পালন