ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঢাকার বাইরে চিকুনগুনিয়া শনাক্তের ব্যবস্থা নেই

কিট সংকটে বন্ধ পরীক্ষা, লক্ষণ দেখে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা

ঢাকার বাইরে চিকুনগুনিয়া শনাক্তের ব্যবস্থা নেই

.

 তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০১:২৭ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ০৮:১০

জেলায় জেলায় চিকুনগুনিয়া রোগী বাড়লেও রাজধানী ছাড়া কোথাও ভাইরাসজনিত এ রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। ঢাকার তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া চিকুনগুনিয়ার পিসিআর পরীক্ষা কোথাও হয় না। সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘদিন কিট কেনা হয়নি। ফলে ঢাকার বাইরের রোগীদের জ্বর ও উপসর্গ দেখে পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম জানিয়েছেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৩৩৭ নমুনার বিপরীতে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত সবাই ঢাকার বাসিন্দা। পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে রোগীরা আইইডিসিআর তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। তাই প্রকৃত রোগীর তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।

আইইডিসিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারেও রোগী পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে আবার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর জিকায় ১১ ও চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে চিকুনগুনিয়ার কিট কেনা হয়নি। এরপর সরকারিভাবে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাজেটেও কিট কেনার বরাদ্দ নেই। পরিস্থিতি বেগতিক হলে হাসপাতালগুলো কিট কিনে পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পারে।

পরীক্ষা ছাড়া চলছে চিকিৎসা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চিকুনগুনিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগের উপসর্গ দেখে ওষুধ দিয়ে উপশমের চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর, হাড়ের জোড়াসহ প্রচণ্ড শরীর ব্যথা,  মাথাব্যথা ও র‍্যাশ।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. এফ এম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, এ রোগে এমন ব্যথা হয় যে অনেকে দাঁড়াতেও পারে না, জয়েন্ট ফুলে যায়। অনেক সময় ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে। এ রোগের নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হলো পিসিআর। অথচ আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ছাড়া সরকারিভাবে আর কোথাও এ পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে অনেকে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু হলে মাথা, পেট ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। তবে চিকুনগুনিয়ায়  শরীরের জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে ব্যথা বেশি হয়। র‍্যাশও দ্রুত দেখা দেয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বারবার রক্ত পরীক্ষা করতে হয়, চিকুনগুনিয়ায় তা দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। তবে দুই রোগের ব্যবধান না বুঝে যদি ভুল ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তবে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

জ্বর মানেই চিকুনগুনিয়া নয়
আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত মৃত্যু হয় না। তবে কেউ যদি আগে থেকেই দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী হন, কিংবা একসঙ্গে অন্য সংক্রমণ থাকে, তাহলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

ডিএনসিসি কভিড হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা
মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও করোনার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করার সক্ষমতা নেই। পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআর বা আইসিডিডিআর,বিতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

সতর্কতা ও সচেতনতাই মূল ভরসা
বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, জ্বর চলে গেলেও রোগী দীর্ঘদিন ব্যথায় ভোগেন। চিকুনগুনিয়া এখন শুধু ঢাকার নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগী বাড়ছে। অথচ পরীক্ষার ব্যবস্থা, কিট, প্রস্তুতি সবকিছুতেই চরম ঘাটতি। সরকারি উদ্যোগ না বাড়লে এই ভাইরাসজনিত রোগ আরও বেকায়দায় ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন

×