ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সিপিডির সংলাপে হোসেন জিল্লুর রহমান

গায়েবি মামলা ব্যবসা খাতকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলেছে

গায়েবি মামলা ব্যবসা খাতকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলেছে

ফাইল ছবি

 বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ০২:০৪

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, গায়েবি মামলার সংস্কৃতি পুরো ব্যবসা খাতকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটাতে হলে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের ওপর দৃষ্টি না রেখে পুরো সমাজের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগসহ পুরো সরকার ব্যবস্থার সম্মিলিত প্রয়াস থাকতে হবে। গতকাল গবেষণা সংস্থা সিপিডির আয়োজনে আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর এক সংলাপে  তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরেন।

হোসেন জিল্লুর বলেন, পরশু দিন চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে একজন জানিয়েছেন, ১৭০ জনকে আসামি করে একটা হত্যা মামলা হয়েছে। সেখানে ওই ব্যক্তি ৯৫ নম্বর আসামি। এটি একটি গায়েবি মামলা। এ কারণে কার শাস্তি হওয়া উচিত, তা আলাদা করা যাচ্ছে না। অপরাধীদের দিকে দৃষ্টি না রেখে পুরো সমাজের ওপর অপবাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসা-বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটানোর জন্য অর্থ উপদেষ্টা একা কিছুই করতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মধ্যে একটা অদ্ভুত উপসর্গ দেখতে পাচ্ছি। তারা প্রচুর শুনছেন। কিন্তু কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।’
বাজেট প্রসঙ্গে ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে সামনে যাওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারে থাকা চারজন অর্থনীতিবিদ দিয়ে এ কাঠামোতে পরিবর্তন আনা যাবে না। শুধু চলতি অর্থবছরের বাজেট নিয়ে না ভেবে আগামী বছর এবং দীর্ঘ মেয়াদে ভাবতে হবে। তিনি মনে করেন, আগামীতে বাংলাদেশকে প্রধান পাঁচটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো– দেশ কোন গতিতে এগোবে। দেশ ১০০ মাইল গতিতে, নাকি ১০ মাইল গতিতে সামনে যাবে– তা  ঠিক করতে হবে। ২০২৪ সালে ভিয়েতনাম ১০০ মাইল অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে। দেশে প্রতিবছর ২২ লাখ করে তরুণ চাকরির বাজারে আসছে। তাদের  নিয়ে ভাবতে হবে। এ সমস্যার সমাধানে শুধু এক বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে ভাবলে হবে না।
অন্য চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি বাস্তবতায় দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষা মানবসম্পদে রূপান্তর হচ্ছে না। এটি শুধু বাজেটের বিষয় নয়। এ বিষয়ে সবার দায়িত্ব আছে। নাগরিক সমাজকেও এ নিয়ে ভাবতে হবে। জুলাই আন্দোলনে সবাই ছিল। তবে অগ্রভাগে ছিল শিক্ষার্থীরা। অথচ শিক্ষা মানবসম্পদে রূপান্তর করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, সমাজে সমতা আসবে বলে যে ভাবনা ছিল, সে ক্ষেত্রেও উন্নতি হচ্ছে না। 

তাঁর মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সব পরিকল্পনা তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সকে ঘিরে। আগামীতে প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হতে পারে কৃষি, ওষুধ ও  তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতিবিরোধী আলোচনায় চিন্তার উত্তরণ। কেবল আর্থিক 
অসততা দুর্নীতি নয়; প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা, হয়রানি, মানুষের সময়ের অপচয়– এসবও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘টাকার অঙ্ক কমায় বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী নয়। আবার দারিদ্র্য শূন্যে নামিয়ে আনার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য আমারা নিয়েছি। 

আরও পড়ুন

×