ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জুলাই আমাদের গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাক

জুলাই আমাদের গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাক

আবুল কাসেম ফজলুল হক

আবুল কাসেম ফজলুল হক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০১:৪১ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০৮:৪০

জুলাই গণঅভ্যুত্থান সামনে রেখে কিছুটা পেছনে ঘুরে আসতে চাই। বায়ান্ন সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ক্রমে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এবং ঊনসত্তরে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পরও সত্তরের নির্বাচনে ন্যায্য প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় না। তখন আবারও গণতন্ত্রের দিকে অভিযাত্রার শর্ত হিসেবে আমাদের আন্দোলন ক্রমে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের ধারা, প্রকৃতি ও পরিণতি বুঝতে, প্রথম বঙ্গভঙ্গসহ আমাদের বাঁক ও অভ্যুত্থানগুলো অধ্যয়নে আনতে হবে। আন্দোলন ও জনসম্পৃক্ততার প্রশ্নে এবং শাসকদের পরিণতি-বিচারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্বের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। 

আমরা দেখতে পেয়েছি, যখনই দেশে গণতন্ত্র কেন্দ্রীয় মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখার অবস্থায় গেছে, তখনই অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে চলে এসেছে। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন, জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপের আন্দোলন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, এরপরও সামরিক শাসন, জরুরি অবস্থা ও স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোকে নিছক সরকার উৎখাতের ও ক্ষমতার পালাবদলের সহিংস কার্যক্রমে পর্যবসিত হতে দেখে হতাশ হয়েছি। 
জুলাইকে এখনও আশায় বাঁচিয়ে রেখেছি।

একটানা পনেরো বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এরপর একটি নির্বাচন দিয়ে আবারও মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপরই আসে জুলাই আন্দোলন। শাসনের ওই পনেরো বছর একটা বড় সময়। এই সময় দৃশ্যমান কিছু বড় কাজ হয়েছে। যেমন– পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলীর পাতালপথ। কিন্তু ভেতর থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরাসহ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ সীমাহীন অন্যায় করেছে। অন্যায়ের মধ্যে রয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-অনেকের মৃত্যুসংবাদ। অনেককে নানাভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। সমাজের ভেতর থেকে জনসাধারণকে নানাভাবে দমন করে রাখা এসব নীতি মানুষ কখনও গ্রহণ করতে পারেনি, করার কথাও নয়। এই যে মানবিক বিপর্যয়, এর পাশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রভৃতি দৃশ্যমান উন্নতি ছোট হয়ে গেছে। যেহেতু মানুষ ভুগেছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে, সেইসব নির্যাতনের উপলব্ধিটাই সাধারণ মানুষের ভেতর বেশি হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা-শাসনের পতনের পর সেই রকম দুর্ভোগ থেকে মানুষের কিছুটা মুক্তি ঘটেছে, এমন একটি অনুধাবন ও অভিব্যক্তি গ্রামে এবং শহরে সর্বত্রই মানুষের ভেতর দেখতে পেয়েছি।

২০২৪-এর জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হলে বিএনপি ও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু পদত্যাগের আগের দিন তিনি বলেছিলেন, একটি বিদেশি শক্তি তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এক পর্যায়ে তিনি দেখলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ এদের সমর্থন দরকার হয়। এদের মধ্যে যখন সরকারবিরোধী মনোভাব দেখা দেয়, তখন পৃথিবীর কোথাও আর সরকার টিকে থাকতে পারে না।

শেখ হাসিনা যদি একটি সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারতেন, তাহলে পরিণতি এমন হতো না। এখনও কি সেই ঐক্য হচ্ছে? না হলে ফলাফল কী?
২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের সঙ্গে পীড়িত মানুষ ঐতিহাসিকভাবে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনার পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলল। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর দেওয়া অবরোধ সরে গেছে। এখন আমরা আশা করতে পারি, গণতন্ত্রের পথে ‘জুলাই’ আমাদের এগিয়ে দেবে। আমরা এই পথে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকৃত কার্যক্রম প্রত্যাশা করছি।

আরও পড়ুন

×