ঢাকায় শ্রিংলার সফরের আলোচনা সম্পর্কে জানাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা- ফাইল ছবি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০ | ০৮:৫৯
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সফরে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি, কভিড-১৯ মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ ভারতের সহায়তায় পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্প, সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকেও এসব বিষয় নিয়ে সবিস্তারে আলাপ হয়।
শ্রিংলার সফরের এক সপ্তাহ পর বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ওরয়বসাইটে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের এই সফরে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর আলোচনা হয়েছে। ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে অংশ ভারত বাংলাদেশকে যে যে অগ্রাধিকার দেয়, তারই প্রতিফলন এই সফর। দু'দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন যা দুই দেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পররাষ্ট্রসচিব শ্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত ১৮ ও ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরের প্রথম দিন বৈঠক করেন। বৈঠককালে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ২০২১ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছল পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশের যৌথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলাপ হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর বছর ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ভারত স্মারক স্ট্যাম্প ইস্যু করার পরিকল্পনা করেছে বলে অবহিত করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মার্চ মাসে মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী উদযাপনে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে।
এতে বলা হয়, উভয় পক্ষই কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। আলোচনায় উঠে আসে, ভারত বাংলাদেশকে কভিড-১৯ মোকাবিলায় সহায়তা করছে। এর অংশ হিসেবে সার্ক দেশগুলির নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কভিড-১৯ মোকাবিলায় সার্ক জরুরি তহবিল গঠন করা হয়। বাংলাদেশ চিকিৎসা কর্মীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি কোর্স পরিচালনা করে আসছে। আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের উন্নয়ন এবং বিতরণের বিষয়ে ভারতের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করেন। উভয় পক্ষ ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশে ভারতের উন্নয়নের সহায়তার ক্ষেত্রে যোগাযোগ এবং বিদ্যুতের ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব পাইপলাইন এবং আখাউড়া-আগরতলা এবং চিলাহাটি-হলদিবাড়ি এবং খুলনা-মংলা রেল লাইনের মধ্যে রেল যোগাযোগাগের প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এই প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটি আগামী বছরে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলো সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুরো গুরত্ব পর্যালোচনা করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর্যায়ে যৌথ পরামর্শক কমিশনের পরবর্তী বৈঠক শিগগিরই ডাকার ব্যাপারে ঐক্যমত্য হয়। চলমান প্রকল্পগুলোর নিয়মিত অগ্রগতি পর্যালোচনা জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদারকি ব্যবস্থা স্থাপনেরও প্রস্তাব করা হয়।
আলোচনায়, অফিসিয়াল, ব্যবসায় এবং চিকিৎসা ভ্রমণকারীদের জন্য সীমিত আকারে বিমান যোগাযোগ চালুর প্রস্তাব দেয় ভারত। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবের প্রশংসা করা হয়।
আলোচনায় সীমানা সীমান্ত অপরাধ রোধে বেড়া দেওয়া এবং যৌথ প্রচেষ্টা সহ সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্য থেকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ভারতের পক্ষ থেকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবকে ভারত সফরেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কয়েক বছরে ভারত ও বাংলাদেশ স্থল ও সমুদ্রসীমা সহ জটিল বিষয়গুলি সুস্পষ্টভাবে সমাধান করেছে এবং যোগাযোগ ও বাণিজ্যকে জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আগরতলা থেকে কলকাতায় চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যবাহী পরিবহন শুরু, অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট সহযোগিতা বৃদ্ধি, ভারত থেকে বাংলাদেশে ১০টি লোকোমোটিভ উপহার প্রদান এবং দুই দেশের মধ্যে পার্সেল ও কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু।