নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার আবেদন আর নয়

আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ | ১৫:০১ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ | ১৫:২৪
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা ছাড়া নতুন করে আর কোনো ক্যাটাগরিতে (শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে না। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য যেসব আবেদন এখন জমা রয়েছে, সেইসব আবেদন ছাড়া আর কোনো নতুন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গ্রহণ করা হবে না।
গত ১৩ অক্টোবর জামুকার সভার সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬১ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্তি এবং ৫১ জনকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টিও অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে মুজিবনগর সরকারের ৩২ জন কর্মচারী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানকারী মেডিকেল টিমের ৯ জন ডাক্তার ও নার্স, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী ১১ জন, মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১১ জন ও ৯ জন প্রবাসীও রয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জামুকার সভার কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জামুকার মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মুক্তিযোদ্ধার আবেদন গ্রহণ প্রসঙ্গে সভায় তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের কমিটিতে তা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে বলা হয়, 'বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন উপকমিটির যাচাই-বাছাইয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাকচ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেদনকারীদের দাবির সত্যতা পাওয়া যায় না। ফলে এ নিয়ে যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন। তাই বাস্তবতার নিরিখে বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আমরা সে লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। শিগগিরই ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর এ জন্যই বীরাঙ্গনা ছাড়া নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। কারণ, এরই মধ্যে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেছে। যারা আবেদন করার, তাদের কেউ বাকি থাকার কথা নয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য করা প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৮। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ৯৮২ জন। এখন পর্যন্ত ১৯ ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট, বেসামরিক যুদ্ধাহত গেজেট, খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট, মুজিবনগর গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমানবাহিনী গেজেট, নৌবাহিনী গেজেট, বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, নৌ কমান্ডো গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল গেজেট, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট এবং বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তার ও সেবাকর্মী গেজেট। এ ছাড়া শিগগিরই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটির গেজেট প্রকাশের বিষয়টি অপেক্ষমাণ রয়েছে।
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ভাতা পান ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার, বীরউত্তমদের মাসিক ২৫ হাজার, বীরবিক্রমদের ২০ হাজার ও বীরপ্রতীকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ও সর্বনিম্ন ২৫ হাজার এবং শহীদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হারে বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতাও দেওয়া হচ্ছে।