ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মানুষকে শিক্ষা দিতেই মনে হয় করোনা এসেছে: প্রধানমন্ত্রী

মানুষকে শিক্ষা দিতেই মনে হয় করোনা এসেছে:  প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ১১:৩১ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ১১:৩৮

কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি না করে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়ন। কিছু পাওয়া নয়, মানুষের জন্য কিছু করতে পারাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, দেশ নিয়ে যাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমি এখন ঘরের মধ্যে একা, তাই মাস্ক পরছি না। কিন্তু লোকজন এলেই মাস্ক পরি। লোকজনের সামনে এলেই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।'

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা দেখিয়ে দিল টাকা-পয়সা কোনো কিছুর মূল্য নেই। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ করোনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে। তবে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক কার্যক্রম এক দিনের জন্যও থামতে দেয়নি। অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি মাইনাসে চলে গেছে। বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে রাখতে না পারলেও পাঁচ শতাংশের ওপরে থাকবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারির এই সময়ে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আয় করা টাকা জীবন বাঁচাতে কাজে আসেনি। একটা সময় দেখা যেত, একটু কিছু হলেই অনেকেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতেন। কিন্তু করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেল, টাকা-পয়সার কোনো মূল্য নেই। আর মনে হয়, মানুষকে শিক্ষা দিতেই এই করোনাভাইরাস এসেছে।

করোনায় অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে তার সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস এসে সারা দুনিয়া স্থবির করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকার কিন্তু থেমে থাকেনি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করে চলছি। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রণোদনা দিয়েছে। এতে অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা করেও বেঁচে থাকতে পারছেন।

তিনি বলেন, আমরা করোনা মহামারিতে মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। কারণ ঘাবড়ে না গিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। শুরু থেকেই সরকারের একটা পরিকল্পনাও ছিল। আমরা প্রত্যন্ত এলাকায়ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। করোনা সংক্রমণ শুরুর পরই দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেছি, নার্স নিয়োগ দিয়েছি। এমনও সময় ছিল, যখন হাঁচি দিলেও অনেকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতেন। করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে, দেশেই চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব।

করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে যেন খাদ্য সংকট তৈরি না হয়, এজন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য সংকট যেন তৈরি না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার আবার একটা ধাক্কা আসছে। সচেতন হলে কিন্তু সুস্থ থাকা যায়। মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে; এখন এর বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন আসছে, তা নিয়ে নানা গবেষণাও চলছে। সরকার এক হাজার কোটি টাকা আগাম দিয়ে ভ্যাকসিন অর্ডার করেছে। যখনই বাজারে আসবে আমরাও পাবো।

বিএনপির উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, 'আমার জানতে ইচ্ছে হয়, যারা বলেন দেশে গণতন্ত্র নেই; তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, জিয়াউর রহমান যখন হত্যা-ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, '৯৬ সালে ভোটচুরি করে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় এলেন এবং ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন মেয়েদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করল- তখন কি দেশে গণতন্ত্র ছিল?'

বিএনপির মিথ্যাচার থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বিএনপি। এখন তারা কী করে? বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের আগে খুব হইচই করে; কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরে পরাজয়ের ভয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এরকম করে। এটা তাদের 'প্ল্যান বি'। তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তারা নির্বাচনের দিন বাসে আগুন দিয়ে আবার সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের নানা সমালোচনাও করে!

সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সমালোচনা হলে ভালো। এতে সরকারের কার্যক্রমের ভালোমন্দ আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু অপপ্রচার কেন? সমালোচনায় আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু ভালো কাজ করলে সেটা একটু স্বীকার করেন। আপনারা যা ইচ্ছা লিখতে পারেন। এতে হয়তো পত্রিকার কাটতি বাড়বে। হয়তো এনজিওর জন্য বিদেশি ফান্ড আসবে। কিন্তু এই ফান্ড কোথায় যায়? ভবিষ্যতে এটার হিসাব নেওয়া শুরু করব।'

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নয়, নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। হত্যা-খুন-ক্যু এসব করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, তৃণমূল পর্যন্ত দলের কমিটি করে ফেলতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পাওয়াটাই বড় নয়, বরং কী দিতে পারলাম- সেটাই বড়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, চিরদিন কেউ বেঁচে থাকে না। সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি হয়ে গেলে অনেক কাজ করা যাবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লা হীরু, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×