গোল্ডেন মনিরের ব্যাংক হিসাব ও প্লটের নথি চেয়েছে দুদক

হকিকত জাহান হকি
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৫:৩৮
স্বর্ণ চোরাকারবারি ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের ব্যাংক হিসাব ও দুই শতাধিক প্লটের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ও রাজউকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে মনিরের স্ত্রী ও প্লট জালিয়াতির ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবও চাওয়া হয়েছে।
দুদক উপপরিচালক মো. সামছুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠি দুটি গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে পাঠানো হয়েছে। গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে যথাশিগগির তথ্যগুলো পাঠানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মনিরের দুর্নীতির সহযোগী রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এরই মধ্যে তলব করেছে দুদক। তাদের আগামীকাল ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিএফআইইউতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গোল্ডেন মনির রাজউকের ২০০টি প্লট দখল করতে গিয়ে রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মনিরের স্ত্রী, রাজউক, গণপূর্তের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পদ, ব্যাংক হিসাব, এফডিআর, মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
বিএফআইইউতে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মনিরের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল, দুই শতাধিক প্লট দখল, হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
রাজউকে পাঠানো চিঠিতে মনিরের দখল করা প্লট ও মেরুল বাড্ডা প্রকল্পের জমি দখলের নথিপত্র চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে চার ধরনের রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- মনিরের দখল করা দুইশ প্লটের নথি, রাজউকের পূর্বাচল, বাড্ডা ও উত্তরা তৃতীয় পর্ব আবাসিক প্রকল্পে মনির, তার স্ত্রী রওশন আক্তারের নামের প্লট ও জমির নথি, মনির ও তার স্ত্রী কতগুলো প্লটের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা ক্রয়সূত্রে মালিকানা অর্জন করেছেন- সে-সংক্রান্ত তথ্য এবং রাজউকের মেরুল বাড্ডা প্রকল্পের খালি জায়গা দখল ও মালিকানা-সংক্রান্ত তথ্য।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, মনির প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরার বিলাসবহুল জমজম টাওয়ারের মালিক হয়েছেন। রাজউকের প্লট দখল করতে তিনি রাজধানীর দিলকুশার রাজউক এনেক্স ভবনের একটি কক্ষ জোর করে দখল করেছিলেন। সম্প্রতি ওই কক্ষ তল্লাশি করে রাজউকের ৭০টি নথি উদ্ধার করা হয়। বাড্ডা প্রকল্পের ৭৪টি প্লট দখলের কাগজপত্রও পাওয়া যায়।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মনির ও তার স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি, শেয়ার, এফডিআর, প্রাইজবন্ড, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাতে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকাসহ নানা সম্পদ রয়েছে তাদের নামে। ওই সব সম্পদের বৈধ উৎস নেই। তার স্ত্রী একজন গৃহিণী হয়েও মোটা অঙ্কের সম্পদের মালিক হয়েছেন।
মনির ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের সম্পদের হিসাব চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর তাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক। গত বৃহস্পতিবার দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের স্বাক্ষর করা নোটিশ দুটি তাদের ঠিকানায় পাঠানো হয়।
স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গত ২১ নভেম্বর গোল্ডেন মনিরকে রাজধানীর বাড্ডায় তার নিজের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।
- বিষয় :
- গোল্ডেন মনির
- প্লট
- ব্যাংক হিসাব
- প্লটের নথি
- দুদক