ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ নাগরিকের চিঠি

ইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ নাগরিকের চিঠি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৯:১০ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৯:১৪

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিসহ গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ এনে 'সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের' মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন তারা।

শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সিইসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি। তবে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ রোববার কমিশনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। তবে  শনিবার কমিশনের সদস্য রফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন এই অভিযোগের সারবত্তা আছে, তাহলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। ৪২ জন নাগরিকের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্‌দীন মালিক। এক সময়ে তিনিও ইসির প্যানেলভুক্ত আইনজীবী ছিলেন। গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও এম হাফিজউদ্দিন খান। চিঠিতে সাংবিধানিক এই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বরাবর দেওয়া আবেদনে ইসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হয়েছেন। কমিশনের সদস্যরা গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ। একইভাবে তারা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া আবেদনে পত্রিকায় প্রকাশিত আর্থিক অনিয়মের খবর, কর্মচারী নিয়োগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের করা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজন নির্বাচন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহার, ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে অনিয়ম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অসদাচরণ, অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শাহ্‌দীন মালিক বলেন, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুতর অসদাচরণের কারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত হওয়া উচিত। এরপর এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে অনিয়মের কারণে অপসারণ করবেন বলে তারা আশা করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে সবসময়ই নির্বাচন কমিশন কমবেশি বিতর্কিত ছিল। কিন্তু সরাসরি আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল, তা দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এ বিষয়গুলো দেখার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। আর সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনাররা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে দূরে থাকবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে ও সংবিধান মেনেই তারা এসব অভিযোগ করেছেন। এখন নির্বাচন কমিশনকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো দরকার।

চিঠিতে স্বাক্ষকারী অন্যরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আহমেদ কামাল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সি আর আবরার, আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লুবনা মরিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, গোলাম মোর্তুজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টার ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- (১) 'বিশেষ বক্তা' হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে ২ কোটি টাকার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম। (২) নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম। (৩) নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম।

অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম- ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে অনিয়ম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনিয়ম, ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম।

আরও পড়ুন

×