গৌহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন
মিজোরামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানায় উদ্বেগ বিজিবির

ছবি: সংগৃহীত
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৮:৩৯ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৯:০৯
বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিজিবির পক্ষ থেকে এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে এ অনুরোধ জানানো হয়। সম্মেলন শেষ হওয়ার পর দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের যৌথ বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজিবির অনুরোধের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের 'জিরো টলারেন্স নীতি'র কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এসব আস্তানা যদি থাকে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন ২২ ডিসেম্বর শুরু হয়। শেষ হবে শনিবার। এতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
সম্মেলনে সীমান্তে বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক ও দুর্বৃত্ত কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত, মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় রাত্রিকালীন যৌথ টহল পরিচালনা বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা, যথার্থ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের প্রশংসা করে। তারা প্রত্যাশা করে বিজিবি এবং বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
সীমান্তে হত্যার ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিএসএফ মহাপরিচালক আশ্বাস দেন। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয়পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণে সম্মত হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদকপাচারের ফলে উভয় দেশের যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা উভয়ের জন্য বিপজ্জনক এবং এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার।
প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন, যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে- এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। উভয়পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম, সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে, একইসঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।