পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
পদোন্নতি পেয়েও আগের পদে ৭৪ কর্মকর্তা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১৬:১৫
কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি মানে উপরের পদে আসীন হওয়া। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের পরিধিও বৃদ্ধি পাওয়া। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৭৪ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। পদোন্নতি পেয়েও তারা আগের পদে বহাল আছেন। তাদের পদগুলোতে আগে থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন জুনিয়র কর্মকর্তারা। এ কারণে পদোন্নতি পেয়েও তারা নিজ পদে যোগদান করতে পারছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হওয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এই কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির কথাও ভাবছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ গত ৭ ডিসেম্বর বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারভুক্ত ৭৪ কর্মকর্তাকে উপপরিচালক পদের শূন্যপদে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে নিজ পদে বহাল রেখে যোগদান করতে বলা হয়। এরপর পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা উপপরিচালক পদে যোগদান করেন। তাদের মধ্যে ২৮ কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ে এবং অন্যরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। উপজেলা পর্যায়ে উপপরিচালকের কোনো পদ নেই। তবে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়া এই কর্মকর্তাদের দুই ধাপ নিচের পদে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে একদিকে বিষয়টি তাদের জন্য যেমন অমর্যাদাকর তেমনি বেতন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
পদোন্নতি পাওয়া কয়েক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসন ক্যাডারের মতো পবিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপার নিউমারারি কোনো পদ নেই।
অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে যে কোনো পদে যে কোনো কর্মস্থলেই পদায়ন করা হলে তার বেতন-ভাতা পেতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে এ ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা কেবল নির্দিষ্ট পদোন্নতিপ্রাপ্ত শূন্যপদেই পদায়ন পেতে পারবেন।
এই কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তারা কোনো পদোন্নতি পাননি। এতে উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক এমনকি পরিচালকের পদেও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা মেডিকেল অফিসাররা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। এ পদগুলোতে পদোন্নতি পাওয়া পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। তবে দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ায় সদর দপ্তর বা জেলা পর্যায়ে সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালক পদের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। এ কারণে সব পদেই জুনিয়র কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন ইউনিটে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়া একাধিক নিয়মিত কর্মকর্তা থাকার পরও সদ্য সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়া এক কর্মকর্তা উপপরিচালক (পারসোনেল) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থ ইউনিটে উপপরিচালক (হিসাব) পদেও একজন জুনিয়র কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। আইইএম ইউনিটে দু'জন নিয়মিত উপপরিচালক থাকার পরও জুনিয়র কর্মকর্তা দুটি উপপরিচালক পদেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটেও নিয়মিত উপপরিচালককে বঞ্চিত করে জুনিয়র কর্মকর্তা উপপরিচালকের পদের দায়িত্বে রয়েছেন। এই কর্মকর্তারা সবাই সরাসরি যোগদান করা ক্যাডার কর্মকর্তা। সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এমনটি ঘটছে বলে দাবি করেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর সমকালকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। উপপরিচালকের পদ শূন্য না থাকায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের আপাতত পদায়ন করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন বলে জানান সচিব।