ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ডেল্‌টা লাইফের সংবাদ সম্মেলন

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১৬:০৫

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা 'ঘুষ দাবির' অভিযোগ উঠেছে। প্রথম প্রজন্মের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ডেল্‌টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করে। কোম্পানিটির দাবি, অজানা কারণে তাদের বিরুদ্ধে স্পেশাল অডিট ও ইনভেস্টিগেশন অডিট করা হয়। এমনকি সিইওর পুনর্নিয়োগ নবায়ন করা হচ্ছে না। ঘুষের টাকা দেওয়া হলে এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আইডিআরএর চেয়ারম্যান। গতকাল ঘুষ দাবির কথোপকথনের দুটি অডিও প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেনও অর্থ চাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তার দাবি, কোম্পানিটির পক্ষ থেকেই প্রথমে ঘুষ প্রস্তাব করা হয়। পরে যে টাকা চাওয়া হয়, তা 'নিজের' জন্য নয়; বরং ডেল্‌টা লাইফের 'বঞ্চিত' কিছু ব্যক্তির জন্য সমাঝোতার অংশ হিসেবে তা চেয়েছিলেন। ঘুষের বিষয়টিকে 'মিথ্যা' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ডেল্‌টা লাইফ কয়েকটি সংস্থার কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তা প্রমাণিত হয়নি। আমিও এ বিষয়ে মামলা (মানহানি) করে রেখেছি, এটি চলমান। ডেল্‌টার আউয়াল নামের এক কর্মকর্তাই ঘুষ নিয়ে এসেছিলেন, সেটির রেকর্ডও আমার কাছে আছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে ডেল্‌টা টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে ধরেন ডেল্‌টা লাইফের পরিচালক জীহাদ রহমান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মহিমুল ইসলাম মিল্টন, আইনি পরামর্শক ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান এবং যুগ্ম নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল হক।

জীহাদ রহমান জানান, আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান এক সময় ডেল্‌টা লাইফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ কোম্পানির ২০১৯ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে লাইফ ফান্ডের অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস অনুমোদন দেয়নি আইডিআরএ। এমনকি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আদিবা রহমানের নিয়োগও নবায়ন করেনি। এ ছাড়া কোম্পানিকে নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিচ্ছেন চেয়ারম্যান।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে 'সাসপেন্ড' করে প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিচ্ছেন।

লিখিত বক্তব্যে চৌধুরী কামরুল আহসান জানান, এসব বিষয়ে সমাধান করতে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ডেল্‌টার এক কর্মকর্তা আলোচনা করতে যান। তখন তিনি (আইডিআরএ চেয়ারম্যান) প্রথমে দুই কোটি টাকা, পরে এক কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা 'উৎকোচ' দাবি করেন। এরপর কোম্পানির পক্ষ থেকে ঘুষ দেওয়ার বদলে তারা কথোপকথন রেকর্ড করার কৌশল নেন। গত ৭ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অডিওসহ এ বিষয়ে অভিযোগও দাখিল করা হয়েছে। পরে হাইকোর্ট কমিশনকে দ্রুত তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডেল্‌টা লাইফের কর্মকর্তারা আরও বলেন, জীবন বীমা খাতের একটি প্রতিষ্ঠিত ও আর্থিকভাবে সচ্ছল কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের হুমকি খুবই দুঃখজনক ও হতাশার। এমনটি করা হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো বীমা খাতে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইডিআরএর দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক জীহাদ রহমান জানান, প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ডেল্‌টা লাইফের অ্যাকচুয়ারি ভ্যালুয়েশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্‌টা লাইফে স্পেশাল অডিট এবং ইনভেস্টিগেশন অডিট করা হয়েছে। এ কাজটি এমন একটি অডিট ফার্মকে দিয়ে করা হয়েছে, যেটির মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফার্মটি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত অডিট ফার্মের তালিকায় স্থান পায়নি। এ ফার্মের তোলা আপত্তিগুলো ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আইডিআরএ থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। শিগগির ওইসব অভিযোগ বা অনিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। তা ছাড়া অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগের চেষ্টা করা হলে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় ঘুষ দাবি করা সংক্রান্ত দুটি অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের শোনানো হয়। দু'বারই ডেল্‌টা লাইফের কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। অডিওতে মোশাররফ হোসেনকে বলতে শোনা যায়, "...আমি নিজে যদি বলতাম, ঠিক আছে, আপনি যেই ১০ নিয়ে আসছিলেন, ওইটা নিয়ে আসেন আগে। আজকেই নিয়ে আসেন... আমি চাই যে, এটা 'ইয়ে' হোক, সলিউশন হোক।" একটি অডিওতে তিনি কোনো একজন 'স্যার'-এর জন্য টাকা চান।

যোগাযোগ করা হলে ডেল্‌টা লাইফের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান সমকালকে বলেন, 'আপনারা যে অডিও শুনেছেন, একটি সংস্থা থেকে পেয়ে তা আমিও শুনেছি। এখানে পুরোটা নাই, আংশিক। পুরোটা শুনলে বুঝতেন তাদের অভিযোগ ঠিক নয়। কয়েকটি সংস্থায় এটি গেছে, তারা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি।'

মোশাররফ হোসেন উল্টো অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত কারণে কোম্পানিটি বিভিন্নজনের মাধ্যমে তাকে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু গণমাধ্যমেও রিপোর্ট করানো হয়। তিনি আরও বলেন, 'এরপর বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করি। তবে নিজের জন্য নয়। আউয়াল সাহেব আমার জন্য যে টাকা নিয়ে এসেছিলেন, তা কাউকে অনুদান দেওয়ার কথাও বলি। তারা নিয়ে এসেছিল কিনা, তা ওদের কাছে জানতে চান।' অবশ্য গতকাল রাতে ঘুষের টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ডেল্‌টা লাইফের কর্মকর্তারা।

কথোপকথনে উল্লেখ থাকা এক 'স্যার'-এর বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, 'কোম্পানিতে অনেক সমস্যা আছে, অনেক বঞ্চিত আছেন... তাদের অনেক খরচ হয়েছে ... ওদের জন্যই একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। আমি প্রথমে টাকা চাইনি, ওরাই ১০ লাখ টাকা নিয়ে এসেছিল। ওইদিন ঘুষ প্রস্তাবের কারণে আইনি ব্যবস্থা না দেওয়াই ভুল হয়েছে।'

দায়িত্বশীল পদে থেকে অডিট আপত্তির বিষয়ে ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, 'এটা ঠিক হয়নি।' তিনি জানান, দুদকের কাছ থেকে ঘুষ দাবির অভিযোগের নথি পাওয়ার পর তিনি মানহানির মামলা করেছেন।

আরও পড়ুন

×