রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরাতে নয়া গেমপ্ল্যান

ফাইল ছবি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২০:৪২
রাখাইনে রোহিঙ্গা মুরব্বিদের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনা অধিনায়কদের সাক্ষাতের ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা দৃশ্যত ইতিবাচক মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি দৃষ্টি সরানোর কৌশল কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এমনকি মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানই রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরানোর জন্য একটি বড় ধরনের 'গেমপ্ল্যান' হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার 'মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান : রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর এর প্রভাব' শিরোনামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব সংশয়ের কথা জানান।
ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুবুল হক ও ড. লাইলুফার ইয়াসমিন।
শহীদুল হক বলেন, সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বাবা আর্মির জেনারেল ছিলেন এবং সু চির জন্ম সেনানিবাসে। বর্তমান সেনাপ্রধানসহ অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সবাই সু চির পরিচিত। দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সু চির ভূমিকা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল। তিনি বলেন, শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের এই নেত্রী বড় ধরনের ভাবমূর্তি সংকটেও পড়েন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার জন্য মামলাসহ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়ছিল। এ কারণেই সন্দেহ করার কারণ আছে- এই সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা সংকট ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে একটি 'গেমপ্ল্যান' হতে পারে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা অসম্ভব কিছু নয়।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরু হয় এবং দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন শহীদুল হক। এর পর প্রায় দুই বছর পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন শহীদুল হক। তিনি এই সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তিসহ এ সংকটে দেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা মামলার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি সর্বসম্মত বিবৃতি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু সেখানে 'মিয়ানমারের সংহতি'র বিষয়টির উল্লেখ করায় তা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ মিয়ানমারে সিরিয়া কিংবা লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এর পরও বিবৃতিতে 'সংহতি'র উল্লেখ বোধগম্য নয়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাজনৈতিক মানচিত্রের কোনো পরিবর্তন হয় কিনা, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তা দমনে খুব বেশি তৎপর নয় সেনাবাহিনী। সম্ভবত, মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের নায়করা ভালো করেই জানেন এখন কী ঘটছে এবং তাদের কী করতে হবে। আবার সেনা অভ্যুত্থানের পর আরাকান আর্মিও কোনো বিবৃতি দেয়নি। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয়।
ড. মাহবুবুল হক রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ান দেশগুলোর উদ্যোগের প্রতি গুরুত্ব দেন। ইন্দোনেশিয়া সফরে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের যে বিশেষ সভা আহ্বানের কথা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মত দেন তিনি।
- বিষয় :
- মিয়ানমার
- রোহিঙ্গা
- রোহিঙ্গা ইস্যু