বিল না দিতে বেবিচকের গোঁ, আদালতে ঠিকাদার

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ | ১৬:৩৭
কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। কাজ দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে চূড়ান্ত প্রত্যয়নপত্রও দেওয়া হয়েছে। বিল দেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট সরকারি দপ্তর অর্থও ছাড় করেছে। বিল পরিশোধ করার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বেবিচককে তাগিদ দিয়ে পত্রও দেওয়া হয়েছে। কাজের ওয়ারেন্টির সময়ও অতিবাহিত হয়েছে। তারপরও ঠিকাদার বিলের জন্য ঘুরছেন প্রায় দেড় বছর ধরে। শেষ পর্যন্ত বিল পাওয়ার জন্য ঠিকাদারকে উচ্চ আদালতে মামলা করতে হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের প্রকল্প ঘিরে। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত দরপত্রে যোগ্য কোম্পানিকে কাজ না দেওয়া নিয়ে এর আগে মামলা দেখা গেছে। তবে কাজ শেষে চূড়ান্ত প্রত্যয়নপত্র দেওয়া এবং অর্থ ছাড়ের পর ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ না করার ঘটনা যেমন বিরল, তেমনি এ নিয়ে মামলা করার ঘটনাও বিরল। ঠিকাদার বশীর এন্টারপ্রাইজের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, কাজ শেষে চূড়ান্ত প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার পর বেবিচকের বিল পরিশোধ না করার কোনো এখতিয়ার নেই। বরং বিল না দেওয়া বেআইনি। বেবিচক বিল পরিশোধ না করার কোনো উপযুক্ত কারণ দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছে। বেবিচকের একগুঁয়েমির কারণেই মূলত ঠিকাদারকে তার ন্যায্য বিল পাওয়ার জন্য আদালতে যেতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ঠিকাদার যেহেতু আদালতে মামলা করেছেন, সে কারণে আমরা আদালতের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। আদালত যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সেভাবেই পদক্ষেপ নেব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ইমপোর্ট ক্যানোপি (এয়ারসাইড) বর্ধিতকরণের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার কাজের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে বশীর এন্টারপ্রাইজকে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় বশীর এন্টারপ্রাইজকে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শর্ত অনুযায়ী কাজটি শেষ হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর। প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের নিরাপদ অবতরণ ও উড্ডয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় বেবিচক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকল্পের কাজ শেষ করার অনুরোধ জানায়।
বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কারিগরি কমিটির কাজের মূল্যায়নেই বলা হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন এক শিফটের বদলে তিন শিফট কাজ করে মাত্র তিন মাস ২০ দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করে। কয়েক ধাপে মূল্যায়নের পর কমিটি কাজটি সরকারি ক্রয় আইন, ক্রয়বিধি, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী শতভাগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে মত দেয়। এর পর বশীর এন্টারপ্রাইজকে কাজের চূড়ান্ত প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর পর অর্থ ছাড় হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বেবিচক কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে বিলের চেক দেয়নি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিল পরিশোধের জন্য বেবিচককে আটটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় বশীর এন্টারপ্রাইজ বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এর পর বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও একাধিক চিঠি পাঠানো হয় বেবিচককে। তার পরও বেবিচক বিলের চেক দেয়নি। এক পর্যায়ে বশীর এন্টারপ্রাইজ দরপত্রে যে ব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্পের কাজের জন্য ঋণ নিয়েছিল, সেই ব্যাংক দেনা পরিশোধের জন্য বেবিচককে চিঠি দেয়। দেখা যায়, বেবিচক কর্তৃপক্ষ শুধু ব্যাংক ঋণের প্রায় দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, বশীর এন্টারপ্রাইজ এর আগে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার পরামর্শ উপেক্ষা করে একটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে একটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজের দরপত্রের শিডিউল কেনে। সে ঘটনার জের ধরেই বশীর এন্টারপ্রাইজের বিল আটকে রাখা হচ্ছে। বিল পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিল পরিশোধ না করার কারণ জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা বেবিচকের পক্ষ থেকে আদালতেই উপস্থাপন করা হবে। অবশ্য বশীর এন্টারপ্রাইজের আইনজীবী বলেন, আদালতে রিট করার পর রুল জারি হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার জবাব দেয়নি বেবিচক।