ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

স্বাস্থ্যের ডিজির অনুপস্থিতিতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ

স্বাস্থ্যের ডিজির অনুপস্থিতিতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ

আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম - ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১ | ০৮:৫২ | আপডেট: ২০ জুন ২০২১ | ০৯:০১

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রোববার পিপিই, মাস্ক, কিট কেনাসহ নানা বিষয় এজেন্ডায় থাকলেও তা আলোচনা হয়নি। 

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা জানিয়েছেন।

বৈঠকে দেশেই টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগসের বিদ্যমান অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলেই টিকা উৎপাদন সম্ভব বলে তারা মনে করছেন। বিষয়টির কারিগরি দিক পর্যালোচনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া কার্যপত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, আবদুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) এবং আমিরুল আলম মিলন।

কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিল। কিন্তু ডিজি বৈঠকে আসেননি। গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে ডিজি না আসায় সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কমিটির সভাপতি এ নিয়ে ডিজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে বিষয়টি সভাপতি অধিবেশনে তুলবেন বলেও সতর্ক করেছেন।

বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক সানজান কে দাস স্বাস্থ্য সচিবের কাছে সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরি করতে একটি প্রস্তাব পাঠান। সানজান দাসের টিকা তৈরির প্রযুক্তির আরএনডি ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগসের বিদ্যমান অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলে টিকা উৎপাদন সম্ভব।

বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনার জন্য টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির আগের বৈঠকে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে 'উৎসাহ' দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় জানায়, তিনটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের টিকা তৈরির সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে।

এগুলো হলো- ইনসেপ্‌টা ভ্যাকসিন লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এর মধ্যে ইনসেপ্‌টার কভিড-১৯ ভ্যাকসিন রেডি টু ফিল ও মাস্টার সিড উভয় প্রক্রিয়ার সক্ষমতা রয়েছে। পপুলারের মাস্টার সিড থেকে উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। হেলথকেয়ার অনুমোদন পেয়েছে, তবে এখনও উৎপাদনে যায়নি।

বৈঠকের কার্যপত্র বলা হয়, কভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএসডি) মাধ্যমে ২৬৬ কোটি ১৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার মাস্ক এবং ৪০১ কোটি ২৫ লাখ টাকার আরটি-পিসিআর টেস্ট কিট কেনা হয়েছে।

কার্যপত্রে বলা হয়, কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সারাদেশে এক হাজার ১২৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬৬ শয্যা রয়েছে। ঢাকা মহানগর ছাড়া দেশের ২১টি জেলায় আইসিইউ শয্যা আছে। কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ১১ হাজার ৯১৬টি সাধারণ বেড রয়েছে। ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৫০১টি বেড বাড়ানো হয়েছে। দেশে বর্তমানে কোনো অক্সিজেন সংকট নেই। মজুদ অক্সিজেন ৯০০ টন। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৭৫ টন। সরকারি অর্থায়নে ৪০টি ও দাতা সংস্থার ফান্ডে ২৯টি অক্সিজেন প্লান্ট কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৯টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংখ্যা এক হাজার ৬০৩টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা এক হাজার ৫২২টি।

জানা গেছে, বৈঠকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা এখনও না পৌঁছানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কমিটি সহজতর প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তাদের পরিবারের কাছে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছানোর সুপারিশ করেছে।

কমিটির সদস্য আবদুল আজিজ বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তারা প্রণোদনা পাননি। অনেক ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই মানুষগুলো মারা গেছে। তাদের পরিবার নিঃস্ব। তাদের পরিবার কষ্টে আছে। দ্রুত এই প্রণোদনা যাতে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের কাছে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন

×