ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বুয়েটের টর্চারসেলে প্রায়ই শিবির সন্দেহে নির্যাতন চলতো

বুয়েটের টর্চারসেলে প্রায়ই শিবির সন্দেহে নির্যাতন চলতো

 বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৯ | ০৪:০১

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, 'শিবির সন্দেহে' আবরারকে রাত পৌনে ৮টার দিকে সকাল ও অমিত সাহার কক্ষে ধরে আনা হয়। এরপর তার মোবাইল, ল্যাপটপ সবকিছু পরীক্ষা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরার শিবির কর্মী এটা স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হলে আর কে কে শিবির করে এটা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তাকে বেদম পেটানো হচ্ছিল।

আবরার জানান, আমি শিবির করি না। এমনকি কোনো শিবির কর্মী তার চেনাজানা নেই বলেও জানান। আবরারের কথায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হন। দফায় দফায় রাত ১টা পর্যন্ত আরবারের ওপর চলতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। এ সময় বারবার প্রাণে বাঁচার আকুতি জানান তিনি। তবে এতে হামলাকারীদের মন গলেনি।

জানা গেছে, প্রায়ই বুয়েটের কিছু কক্ষকে টর্চারসেল বানিয়ে সন্দেহভাজন শিবির কর্মীদের মারধর করা হয়। এরপর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আবরারকেও মারধর করে পুলিশের কাছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বেদম প্রহারে তার প্রাণই চলে যায়। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মদ্যপ। ফলে তাদের স্বাভাবিক জ্ঞান ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গ্রেফতার কয়েকজন এই কাজে জড়িত থাকায় অনুতপ্ত বলে জানান।

ঘটনার পর কেন জড়িতদের অধিকাংশই পালিয়ে যাননি- এমন প্রশ্নের জবাবে রিমান্ডে থাকা আসামিরা জানান, তাদের বিশ্বাস ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই তারা বেশি নিরাপদ।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। মঙ্গলবার ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে হত্যায় সরাসরি জড়িতদের নাম উঠে এসেছে। ওই সূত্রগুলো বলছে, আগেই ২০১১ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। জেমি এবং তানিম আবরারকে ওই কক্ষে নেওয়ার পর তারা তাদের জেরা করেন। ওই সময়ে কক্ষে ঢোকেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকারসহ কয়েকজন। তখন আবরারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এক পর্যায়ে 'সিনিয়র নেতারা' তাকে শিবির আখ্যা দেন। এরপরই স্টাম্প দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। একপর্যায়ে মারতে মারতে তাকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর আবার শুরু হয় নির্যাতন। আবরার চিৎকার করলে সহসভাপতি ফুয়াদ তাকে মুখ চেপে ধরেন। একপর্যায়ে আবরারকে হল ছেড়ে চলে যেতে বললে তিনি তাতে রাজি হয়েছিলেন।

ওই সূত্রটি জানায়, পুরো নির্যাতনে সক্রিয় অংশ নেন ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশররফ সকাল, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুনতাসির আল জেমি এবং ছাত্রলীগ কর্মী ১৭তম ব্যাচের এমই বিভাগের সাদাত, একই ব্যাচ ও বিভাগের হোসেন মোহাম্মদ তোহা এবং ১৬তম ব্যাচের তানভীর আহম্মেদ। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন।

আরও পড়ুন

×