তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের অবকাশ নেই: আইনমন্ত্রী

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রোববার মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি-সাজ্জাদ নয়ন
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১ | ০৮:১১ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ | ০৮:১৭
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আর কোনো তর্কের অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে বিএনপির দাবি নাকচ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আর কোনো তর্কের অবকাশ নেই। কারণ এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। আর সুপ্রিম কোর্টের রায় যখন মানা হয়, তখন একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। উচ্চ আদালতে রয়ে হয়েছে, রায়ই বহাল থাকবে।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অতীতেও হয়েছে, আগামীতেও হবে।’
রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিআরইউ'র সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বিচার বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে গত এক যুগে বর্তমান সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। পরে সাংবাকিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে-সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে হবে। মহামান্য রাস্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সার্চ কমিটি গঠন করে থাকেন। তাই এই সার্চ কমিটিও আইনের কাছাকাছি। এরপর আইন প্রণয়ন করা হবে। কারণ, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনেও বিএনপি মনোনীত একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এটি সবাই জানেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি চেয়ে দলটির নেতাকর্মীদের দাবি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে নেই। এটা আদালতের বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তার একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অপর একটি মামলা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। এই অবস্থায় তাকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মামলার রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি স্থায়ী মুক্তি পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএপির নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক হওয়ার কারণে ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন।
বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত নেপথ্যের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের পরপরই অতিমারি করোনা মহামারি দেখা দিয়েছে। তাই করোনার দিকে গুরুত্ব দেওয়ায় কমিশন গঠনের সুযোগ হয়নি। তবে কমিশন হবে। ইতোমধ্যে কিভাবে, কাদের দিয়ে এই কমিশন গঠন করা যায়, তা যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে নতুন আইনও করা হবে। এই কমিশন হচ্ছে বিকৃত ইতিহাসকে ফেলে দিয়ে সত্য ইতিহাসকে সঠিক পথে চালিত করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেটি জানানো।’
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
এর আগে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন প্রণয়নের বিষয়ে চিন্তাভাবনা আছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছি। অচিরেই আইন প্রণয়ন করা হবে। তবে ৩০ ডিসেম্বরের আগে হয়ত সম্ভব হবে না। এ সময় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন ও কমিশন গঠনে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
বিচার বিভাগের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের গত ১২ বছরে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগ অনেকটাই মুক্ত।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। এতে করে চলমান বিচারকার্য প্রভাবিত হতে পারে।’
সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যারা দেশের বাইরে বসে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে এ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলা হলেই যেন সাংবাদিকরা গ্রেফতার না হয়, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মামলা হলে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি।
সাইবার অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পরিবার, সরকার, বিচার বিভাগ ও দেশের বিরুদ্ধে অপ্রপচার চালানো হচ্ছে। এ অপরাধে জড়িত সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
এ সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পীর দিল্লুর সিন্ডিকেটের হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
মামলা জট কমাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অধস্তন আদালতের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য সাক্ষ্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইন সংশোধন করা হলে ভার্চুয়াল মাধ্যমেও সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হবে। সংসদের আগামী অধিবেশনে এই সংশোধিত আইনটি পাসের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত ও বিচার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ফৌজদারিতে তদন্তের ভার পুলিশের হাতে। তাই তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ বা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপের বিষয় আসছে না। তবে আপনারা যেহেতু বলেছেন, সেহেতু এ বিষয়ে স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করব।’