বয়ঃসন্ধিকালে শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে: চুমকি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১ | ০৮:২০ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ | ০৮:২০
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরী ও কিশোররা নানা ধরনের মনোদৈহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এ সময় যেন তারা কোনো ভুল না করে বসে, সে বিষয়ে বাড়তি নজর রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
বিশ্ব কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'কিশোরী-কিশোরদের আত্ম-উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবেশের ভূমিকা' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাম চন্দ্র দাস, ইউনিলিভার বাংলাদেশের (ইউবিএল) সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা মার্ফি।
সভাপতিত্ব করেন চিলড্রেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক (সিএজেএন) সভাপতি মাহফুজা জেসমিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, সিএজেএনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক শিপন হাবীব, সদস্য ফারহানা জামান ন্যান্সি ও সাজিদা ইসলাম পারুল। অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ কিশোর-কিশোরী উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তিনজন কিশোরী-কিশোর নিজেদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল), আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং চিলড্রেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক (সিএজেএন) যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, কিশোরী-কিশোরদের সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমাজে বাল্যবিয়ের প্রবণতা আমাদের কিশোরীদের চলার পথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। তাই বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত পুরুষদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সাইফুল আলম বলেন, ঘর বাহির-সবক্ষেত্রে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। তাদের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠলে পরিবার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র উপকৃত হবে। প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে- মানুষ ও দেশের কল্যাণে কাজ করার।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী ৩০ বছরের তুলনায় বিগত ১৫-২০ বছরে বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সময় পাড় করেছে। তবে সময়ের পালাক্রমে বেশ কিছু বিষয়ে বদল এসেছে আমাদের সমাজে। আগে গ্রামগঞ্জে ঘরে ঘরে অনেক সুকুমারবৃত্তির চর্চা হতো, কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতার কারণে আমরা কিছুটা একা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। শিশু ও কিশোরী-কিশোরদের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে এ বিষয়টির ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকাও যথেষ্ট রয়েছে।
রাম চন্দ্র দাস বলেন, কন্যাশিশুদের অগ্রগতিতে এখন বড় ধরনের অন্তরায় হিসেবে রয়েছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ রোধ করতে আমাদের গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ কমিটিও আছে। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে বাল্যবিয়ের বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবে বাল্যবিয়ের হারটা হুট করে বেড়ে গেছে। সমাজে কন্যাশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, এনজিও এবং সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করা জরুরি।
জাভেদ আখতার বলেন, ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ইউনিলিভার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারের অংশীদার হিসেবে ইউনিলিভারের ব্র্যান্ডগুলো সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখছে। এরই অংশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে ডাভ এর সেলফ-এস্টিম প্রজেক্ট। 'ডাভ' তার 'ডাভ সেলফ-এস্টিম প্রজেক্ট' (ডিএসইপি) এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫ কোটি তরুণকে ক্ষমতায়নের মিশনে নেমেছে। কিন্তু ইউনিলিভার তা এককভাবে করতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য পূরণে সরকার, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন অংশীদার, গণমাধ্যম ও বিশেষ করে আপনাদের সবার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
ওরলা মার্ফি বলেন, সমাজের সব স্তরের কণ্ঠস্বর একত্রিত করতে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এদেশে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনাকালে আমরা তরুণদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাদের উৎসাহিত করে ও স্থানীয় সমস্যাগুলো সমাধানে নানাভাবে সাহায্য করছে। সমাজে মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে আত্ম-উন্নয়ন ও শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাস তৈরির মাধ্যমে ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব তৈরিতে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন অংশীদার, ব্র্যান্ড ও সরকার যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তারা সে বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে 'ডাভ সেলফ-এস্টিম প্রজেক্ট' (ডিএসইপি) এর উদ্বোধন করেন মেহের আফরোজ চুমকি। এ সময় বিশেষ অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন।
'ডাভ' এর এই ব্যতিক্রমী বৈশ্বিক উদ্যোগ ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৪২টি দেশের ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। আগামী প্রজন্ম বিশেষ করে নারী শিশুদের নিজের বাহ্যিক অবয়ব সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করা ও তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ডিএসইপি।