বিজয় দিবসে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ
রণক্ষেত্র পাকুন্দিয়া, বাসে আগুন

কিশোরগঞ্জ অফিস, বাজিতপুর প্রতিনিধি ও বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ১০:০৮ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ১০:০৮
বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলেও এ সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘাতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন। একপর্যায়ে সংঘাতকারীরা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ছাড়া দেশের বাজিতপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিজয় দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
পাকুন্দিয়ায় উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয় কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকরা নানা রকম দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাকুন্দিয়া পৌর সদরের প্রধান সড়ক নিজেদের দখলে নেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ও তার সমর্থক নেতাকর্মীরা। পরে তার নেতৃত্বে বিজয় র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে অভিবাদন মঞ্চে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু, ইউএনও রোজলিন শহীদ চৌধুরী ও ওসি মো. সারোয়ার জাহান।
এরই মধ্যে সকাল সোয়া ৯টার দিকে বড়বাড়ি চৌরাস্তা হয়ে বড়বাড়ি সড়ক দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি মোড়ে পৌঁছে। এ সময় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে সংঘর্ষের মধ্যেই সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন ও তার সমর্থকরা। পরে তার সভাপতিত্বে বড়বাড়ি চৌরাস্তা মোড়েও একটি সমাবেশ হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মো. আনোয়ার হোসেন আনারের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুদ্দোহা, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সহসভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন, সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আকরাম হোসেন ভূঁইয়া কাঞ্চন প্রমুখ।
বাসে আগুন: এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে পাকুন্দিয়াভুক্ত মির্জাপুর রোডের মরুরা এলাকায় অনন্যা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বাসটির দরজা, জানালা, সিটসহ বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান জানিয়েছেন, পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
বাজিতপুরে আহত ১৭: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা চলার সময় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বসন্তপুর হরিসভার মোড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৭ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পরে বিকেলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের সারচরের বাসভবনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা শাখার সদস্য মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা পৌর বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেছে।
অন্যদিকে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আশরাফ জানান, তিনি বিজয় উৎসবের মাঠ থেকে ফেরার সময় শোভাযাত্রায় থাকা বিএনপির কর্মীরা উস্কানিমূলক স্লোগান ও মন্তব্য করতে থাকেন। এর ফলে সংঘর্ষ দেখা দেয়।
বাজিতপুর থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, দুই দলের কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে সামান্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।
বগুড়ায় আহত ১২: বগুড়ার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। ৩০টি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর হয়েছে।
সকালে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। একই সময় বগুড়া-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও শহীদ মিনারে আসেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে যান। সেখানে উভয় দল একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।এ নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে।
এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।
- বিষয় :
- বিজয় দিবস
- আওয়ামী লীগ
- সংঘর্ষ
- রণক্ষেত্র