ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রীকে ধর্ষণ: জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রীকে ধর্ষণ: জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

ছবি: সমকাল

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৩১ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শুক্রবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে বৃহস্পতিবার হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তাই চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সে পর্যন্ত সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ আমাদের বোনের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার ন্যায়বিচারের দাবিতে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। এমন দুর্দিনে আমরা দেশের সব শিক্ষার্থীকে পাশে চাই।

বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল-রাজু বলেন, ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় আমাদের ওপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে তার যথাযথ বিচার করতে হবে। এর আগে আমরা আন্দোলন বন্ধ করব না।

ধর্ষণের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পিয়াস সিকদার, অন্তর ও জীবন নামের তিনজনকে আটক করেছিল। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এই মামলার বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। একটু ধৈর্য ধরেন। আমরা ভালো খবর দেব।

গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল মাঠে তৎপর রয়েছে। তারা ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ মদদে হামলার অভিযোগ: শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ মদদে সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবরোধস্থল ঘোনাপাড়ায় আসেন। সে সময় জেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ আমাদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আন্দোলন বন্ধ করতে বলেন। তারা তখন ছাত্রীদেরও হুমকি দেন। এর কিছুক্ষণ পরই অতর্কিত হামলা শুরু হয়। এ সময় পাশেই প্রশাসনসহ পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। হামলাকারীরা তাদের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে আহত করে।

এদিকে ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এলাকাবাসীকে উস্কানি দেওয়ার কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেছেন, 'আমরা চলে যাচ্ছি। যারা ছাত্রলীগ করেন তারা আমাদের সঙ্গে যাবেন, যারা করেন না তারা থাকেন, আন্দোলন চালিয়ে যান। যারা জামায়াত-শিবির করেন তারা আন্দোলন চালান।' ওই বক্তব্যের পরপরই গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'আমি একটা কথা বলি শোনেন। ও জেলা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট, ওর একটা দায়দায়িত্ব আছে। ও আপনাদের ওভাবে একটু কথা বলছে, এতে আপনাদের মাইন্ড করার কিছু নাই। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, যারা ছাত্রলীগ করেন তারা এই আন্দোলন থেকে সরে যান। তাদের অনুরোধ করি তারা আন্দোলন থেকে সরে যান।'

শিক্ষার্থীরা জানান, এ ধরনের বক্তব্যের পরই একদল বহিরাগত দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, 'জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ও তাদের সঙ্গে চলে আসেন। আমরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করি। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই জড়িত ছিল না।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসরা আহ্বান জানাই। কে বা কারা আন্দোলনরতদের ওপর হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই।

শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বসেন উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব, প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর সাদ্দাম হোসেনসহ শিক্ষকরা।

আলোচনা শেষে প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুতই সব আসামির পরিচয় মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, এ ঘটনার বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে।

মশাল মিছিল: ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ও আন্দোলনে হামলাকারীদের দ্রুত আটকের দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জেলা ছাত্রলীগকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মশাল মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

বুধবার রাতে বশেমুরবিপ্রবির এক ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। জড়িতদের আটকের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা ঘেরাও করেন এবং দিনভর ঘোনাপাড়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় একদল সন্ত্রাসী প্রতিবাদরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপরে হামলা চালায়।

আরও পড়ুন

×