ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা

ফাইল ছবি
প্রত্যয় নিশান
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ২২:২১
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনেক। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও অনেক অবদান রেখে চলেছে। মানসম্মত শিক্ষা প্রদান আর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে স্মার্ট সিটিজেন তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। নিরন্তর নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, বিশ্বমানের পাঠদান, গবেষণা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নত-আধুনিক ও সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০০১ সালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠা করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ, সহানুভূতিশীল সচেতন সুনাগরিক তৈরিসহ সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সাধনই ছিল স্যার আবেদের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।
গত বছরের শেষদিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি নতুন ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এই ক্যাম্পাসটা বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব ইনার সিটি ক্যাম্পাস। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে ক্যাম্পাসটি তৈরি করা হয়েছে। মেরুল বাড্ডায় সাত একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ ক্যাম্পাস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে একটি স্বচ্ছ জলাধারের ওপর একাডেমিয়ার কার্যক্রম চলবে। সিঙ্গাপুর, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের সেরা বিশেষজ্ঞরা কাজ করেছেন এ ক্যাম্পাস নির্মাণে।
ভবনটিতে বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করতে ক্রস ভেন্টিলেশন, হাইব্রিড থার্মাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম, অ্যারো ডায়নামিক ফিনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ভবনটিতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
বৃষ্টির পানি জলাধার পর্যন্ত যাতে পৌঁছাতে পারে, সেজন্য অসংখ্য রেইন চেইন বসানো হয়েছে। এ পানি দিয়েই ভবনের গাছপালাগুলোতে সেচ প্রদানের কাজ চলছে এবং বাড়তি পানি জলাধার পূরণে কাজে লাগছে। ভবনের ছাদে রয়েছে ১.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শক্তিসম্পন্ন সোলার প্যানেল, যা এই ভবনের প্রয়োজনীয় শক্তির ২৫ শতাংশ। অত্যাধুনিক ও নান্দনিক এ ভবনের বেশির ভাগ জায়গা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সাভারে অবস্থিত এর রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টার। এ ক্যাম্পাসে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের একটি সেমিস্টার সম্পন্ন করতে হয়। এখানে ‘অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার’ নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সামগ্রিক পাঠ্যক্রম অফার করা হয়ে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনেকগুলো যুগোপযোগী প্রোগ্রাম রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। কয়েক ক্যাটেগরিতে ১০ থেকে শতভাগ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটেগরির স্কলারশিপ। শিক্ষার্থীদের এক্সটা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৩২টি ক্লাব, যেখানে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
শিক্ষা ও গবেষণায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। ২০২৩ সালের টাইমস হায়ার এডুকেশন ইউনিভার্সিটি ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংয়ে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ অর্জনে বিশ্বের সেরা পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক বছর ধরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। উন্নত গবেষণার জন্য ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসসহ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিশ্বের ২৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম-সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। ২০২০ সালে ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্কে প্রথম বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যোগ দিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক হলো বিশ্বজুড়ে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন দ্বারা একত্র হওয়া বৈশ্বিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জোট। সেই সঙ্গে দ্য ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্কের মতো আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে বেড়ে চলেছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিশ্বের ২৭টি দেশের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে গড়ে উঠেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বহু সংস্কৃতিময় এক স্টুডেন্ট কমিউনিটি।
প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৭ সালে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামক নিজস্ব ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২০ (ইউআরসি) প্রতিযোগিতায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পরবর্তী প্রজন্মের রোভার মঙ্গলতরী বৈশ্বিকভাবে তৃতীয় স্থান লাভ করেছে, যেখানে প্রথম স্থানে ছিল ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান ও রানারআপ হয় স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি। ২০২৪ সালের প্রতিযোগিতায় ফাইনালে জায়গা করে নেয় মঙ্গলতরী ফনিক্স।
২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ওয়ার্ল্ড ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। সেই সঙ্গে ২০২১ সালে কেমব্রিজ ইউনিয়ন আয়োজিত বিশ্বের আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ বিতর্ক প্রতিযোগিতা কেমব্রিজ ইন্টারভার্সিটি জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আগামী জুলাইয়ে নেদারল্যান্ডসের আইন্দহোভেনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোবটিকস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম বড় প্রতিযোগিতা ‘রোবকাপ ২০২৪’। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে লড়তে যাচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল ‘ব্র্যাকইউ অলটার’। v
- বিষয় :
- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি