অভিযানের ৩ বছর
ক্যাসিনোকাণ্ডের 'হোতা'রা একে একে মুক্ত হচ্ছেন

ছবি: ফাইল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫:৪৪
ক্যাসিনোকাণ্ডের 'হোতা' হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতরা একে একে জামিনে বেরিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে মুক্ত হয়েছেন যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কারাগারে থাকা অন্যরাও। অভিযোগ রয়েছে, জামিনে বের হওয়া দু'জন তাঁদের হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার ছক কষছেন; গোপনে চালাচ্ছেন নানামুখী তৎপরতা।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন যুবলীগ নেতা খালেদকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। আজ রোববার এ অভিযানের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। ক্লাবপাড়া ঘিরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের নামে চলা শুদ্ধি অভিযানে একের পর এক রাঘববোয়াল গ্রেপ্তার হন। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দেন। যদিও পলাতক অনেকে আবার ফিরে এসেছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর এখন ক্লাবপাড়া ঘিরে দুষ্টচক্রের ব্যাপারে নজরদারিও তেমন নেই। এ ছাড়া অনেকে আবার অনলাইনে ক্যাসিনো ও জুয়ার কারবার খুলে বসেছেন।
সংশ্নিষ্টরা জানান, সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর গত ২৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল ছাড়েন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে এসেই তিনি দলবল নিয়ে রাজপথে বড় ধরনের মহড়া দেন। কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান তিনি। তাঁর এই 'ফিরে আসা' নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা চলে। কেউ কেউ বলছেন, পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামবেন তিনি। এরপর ১ সেপ্টেম্বর রাতে কারামুক্ত হন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এতে তাঁদের দু'জনকে ঘিরে আবারও শুরু হয় নানা আলোচনা। অবশ্য যুবলীগের বর্তমান নেতারা মনে করেন, সে সুযোগ আর নেই। কোন অভিযোগে ও কোন প্রেক্ষাপটে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল- তা সবারই মনে আছে। সুতরাং তাঁরা চাইলেও রাজনীতিতে ফেরা আর সহজ হবে না।
এদিকে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জি কে শামীম, এনামুল হক এনু, তাঁর ভাই রুপন ভূঁইয়া, সেলিম প্রধান, মমিনুল হক সাঈদসহ অন্যরা এখনও কারাগারে আছেন। তবে তাঁরা জামিন পেতে নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন; বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
ক্যাসিনোবিরোধী ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩২টিতে র্যাব ও ১৭টিতে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত ২৮০ জনকে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যৌথ সভায় দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ওই সভায় যুবলীগের দুই নেতার সমালোচনা করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ওই দিন মতিঝিলের চারটি ও গুলশানের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। এসব ক্লাব হলো- ফকিরাপুল ইয়ংম্যান্স ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে ক্লাবপাড়ায়ও চলে অভিযান। এরপর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন ঠিকাদার মোগল জি কে শামীম, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের এনামুল হক আরমান, এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধান, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান রাজীব, সম্রাটের সহযোগী জাকির হোসেন, ময়নুল হক মনজু, ক্যাসিনো কারবারি আক্তারুজ্জামান, রোকন মিয়া, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাইফুল ইসলাম, তুহিন মুন্সী ও নবীর হোসেন।
- বিষয় :
- ক্যাসিনোকাণ্ড
- ক্যাসিনো
- সম্রাট
- যুবলীগ