বাংলা খেয়ালে মুগ্ধতা ছড়ালেন কবীর সুমন

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মঙ্গলবার 'তোমাকে চাই'-এর ৩০ বছর উদযাপনে বাংলা খেয়াল পরিবেশন করেন কবীর সুমন সমকাল
রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ০০:৪১
বাংলা খেয়াল শোনাবেন কবীর সুমন- এমন খবরে বেড়েছিল সংগীতপ্রেমীদের কৌতূহল। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দর্শকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন ছিল নন্দিত এই শিল্পীর কালজয়ী গান 'তোমাকে চাই'-এর ৩০ বছর উদযাপনের দ্বিতীয় পর্ব।
'সুমনের বাংলা খেয়াল' শিরোনামে এ আয়োজনে দেখা মিলল অন্য এক কবীর সুমনের। মঞ্চে উঠে তিনি শুরুতে নিজের সংগীতচর্চা সম্পর্কে বলেন, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান গাইলেও মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন বাংলা খেয়ালে। তাঁর বাবা সুরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়েরও চাওয়া ছিল, তিনি যেন রেকর্ড আকারে রবীন্দ্রসংগীত প্রকাশ করেন, আর তৈরি করেন বাংলা খেয়াল। সুমন বলেন, তাঁর গানের শ্রোতা যত না ভারতে আছে, এর চেয়ে বেশি বাংলাদেশে। বাংলা খেয়াল পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। বাংলাদেশে তিনি তরুণদের মধ্যে এ বিষয়ে উৎসাহ দেখেছেন। আয়োজকরা তাঁকে বলেছিলেন, তিন দিনের আয়োজনে এক দিন যেন অনন্দিত বাংলা খেয়াল গান থাকে- এ অনুরোধ তো ফেলার নয়। তিনিও এমন কিছু চেয়েছিলেন।
গত ১৫ অক্টোবরের মতো মঙ্গলবার সুমন মঞ্চে পা রাখতেই বিপুল করতালিতে দর্শক-শ্রোতা তাঁকে স্বাগত জানান। কিন্তু প্রথম দিনের মতো উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। যতটা খেয়ালের পরিবেশনা, তার চেয়ে বেশি এ সংগীতের ইতিহাস, ধরন ও মাহাত্ম্য তুলে ধরতে তিনি কথা বলেন। খুলে দেন গল্পের ঝাঁপি। সহজ-সরল উপমায় খেয়ালের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। শ্রোতারাও সাড়া দেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাগাশ্রয়ী গান 'এ মোহ আবরণ' ও 'গানের ওপারে' পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বাংলা খেয়ালের আঙ্গিক বোঝানোর চেষ্টা করেন সুমন। এর পর 'সেই তো ছোঁয়ায়' পরিবেশন করেন খেয়াল। তিনি বলেন, খেয়ালের মূল হলো রাগ। আর রাগ হলো কয়েকটি নির্দিষ্ট স্বর, যা দিয়ে রঙের মতোই সুরের ছবি আঁকা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাগের খেলা তুলে ধরেন। বাংলা খেয়াল নিয়ে মেতে ওঠার বিষয়ে সুমন বলেন, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, ফারসি, পশতু, তামিল থেকে শুরু করে নানা ভাষায় যদি খেয়াল গাওয়া যায়, তাহলে বাংলায় এত আপত্তি কেন- এ প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বলেই বাংলা খেয়াল নিয়ে মেতেছি। তিনি বলেন, তাঁর গান শুনে দর্শক আনন্দ পাচ্ছেন কিনা, তিনি জানেন না। বাংলা খেয়াল গাইতে পেরে তিনি ভীষণ আনন্দিত।
এ সময় তিনি আচার্য সত্য কিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আজাদ রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। মঞ্চে এ দুই আচার্যের ছবি ছিল। সুমন বরেণ্য সংগীতস্রষ্টা আজাদ রহমানের 'রাগ আজাদ' পরিবেশন করেন। তিনি সবাইকে বাংলা খেয়াল শোনার অভ্যাস করার আহ্বান জানান।
আধুনিক বাংলা গানের অনবদ্য পরিবেশনা দিয়ে কবীর সুমন এরই মধ্যে জয় করেছেন শ্রোতার হৃদয়। তিন দশক ধরে তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রেখেছেন। সেই শ্রোতারাই গতকাল কবীর সুমনকে নতুনভাবে আবিস্কার করলেন; বাংলা খেয়ালের সুর-মূর্ছনায় মুগ্ধতার পরিবেশ ছড়িয়ে দিলেন। আগামী শুক্রবার রয়েছে কবীর সুমনকে নিয়ে তৃতীয় আসর। সেখানে গাইবেন আবার আধুনিক বাংলা গান। এর মধ্য দিয়ে পিপহোল আয়োজিত 'তোমাকে চাই'-এর ৩০ বছর উদযাপনের শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
- বিষয় :
- কবীর সুমন
- বাংলা খেয়াল
- সংগীতপ্রেমী