ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বাঁধনহারা ‘উদ্দাম নৃত্যে’ উন্মাতাল ঢাবি

বাঁধনহারা ‘উদ্দাম নৃত্যে’ উন্মাতাল ঢাবি

ছবি- সমকাল।

যোবায়ের আহমদ, ঢাবি

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৩:৩৫ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৩:৪৮

চারিদিকে বাঁশি আর ভুভুজেলার ধ্বনি, ক্ষণে ক্ষণে আতশবাজি; স্লোগানে, চিৎকারে আর হর্ষধ্বনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা যেন উল্লাসের নৃত্যে উন্মাতাল। মিছিল, শোডাউনের ডামাডোলে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা বাঁধনহারা উৎসবে আত্মহারা। আলবিলেসেন্তেদের ইতিহাস জয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠ, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, রাজু ভাস্কর্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল প্রাঙ্গণ সমর্থকদের মুহুর্মুহু মিছিল ও উত্তেজনায় একাকার হয়ে পড়ে। 

শোডাউন নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকেন সমর্থকেরা। মধ্যরাত অবধি আর্জেন্টিনার পতাকাসহ ক্যাম্পাসের সড়কে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের শোডাউন দিতে দেখা যায় আরেকদল সমর্থকদের। অনেকে বাজাচ্ছিলেন ভুভুজেলা। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে আর্জেন্টিনার বড় আকারের একটি পতাকা উড়িয়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তারা। ভুভুজেলার শব্দে তাঁরা কাঁপিয়ে তোলেন পুরো টিএসসি এলাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে থাকেন আরও অনেক সমর্থক। একদল বিভিন্ন স্থানে আতশবাজি ফোটান।

রাইসা নূর নামে আর্জেন্টিনার এক দর্শক বলেন, ‘জীবনের সেরা মুহূর্ত কাটিয়েছি। মেসির কিকে গোল দেখা চোখের শান্তি। ডি মারিয়া দারুণ ছন্দে ছিল। সব মিলিয়ে অনুভূতি প্রকাশের অবস্থায় নেই। আমি আনন্দে আত্মহারা। সেরাদের সেরা আর্জেন্টিনা। মেসি দীর্ঘকাল বাঁচুক।’

পরিবার নিয়ে আজিমপুর থেকে খেলা দেখতে এসেছেন মল্লিক হোসেন। সঙ্গে তার স্ত্রী সানজিদা লিসা ও ছেলে আজিম হোসেন। তারা বলেন, প্রথমে ভালো অবস্থানে থাকলেও পরে টেনশনে পড়ে যান। অবশেষে আর্জেন্টিনার জয়ে তারা খুশি। মেসির হাতে একটি বিশ্বকাপ দেখেছেন এটাই বড় কথা।

এদিন খেলা দেখতে সন্ধ্যা থেকেই টিএসসি এলাকা ও মুহসীন হলের মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। মুঠোফোনে লেনদেন সুবিধা প্রদানকারী নগদের সৌজন্যে ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সহযোগিতায় বিশ্বকাপের খেলা দেখতে টিএসসির পায়রা চত্বর, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিন বসানো হয়। বিএনপির সমাবেশ ও বুদ্ধিজীবী দিবসের কারণে কয়েকটি ম্যাচ খেলা প্রদর্শনী বন্ধ থাকলেও ফাইনালে পুনরায় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও তার আশপাশেও পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে ভিড় করেন।

তাঁদের অনেকের গায়ে ছিল আর্জেন্টিনার জার্সি, কারও কারও হাতে আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে রং করা আকাশি-নীল রঙের ভুভুজেলা। কেউ এসেছেন সপরিবার, কেউ কেউ বন্ধুদের নিয়ে। এখানে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়স্ক-সব পর্যায়ের মানুষই ছিলেন। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মা–বাবার সঙ্গে এসেছেন শিশুরাও। হাজারো মানুষের সমাগমে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে টিএসসিসহ ক্যাম্পাস এলাকা।

জানতে চাইলে বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী জিএম হিরক সমকালকে বলেন, ‘আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। জাস্ট অ্যা সুপার ন্যাচারাল ম্যাচ। যে খেল মেসিরা দেখিয়েছে। জীবন ধন্য হয়ে গেল। ২০১৪ সালের কষ্ট ধুয়ে মুছে গিয়েছে।’

স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা আরেক আর্জেন্টাইন সমর্থক শাহরিয়ার খান সাদ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘পুরো খেলা জুড়েই ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। শেষপর্যন্ত জয় পেয়েছি, এটা কোনো চাট্টিখানি কথা নয়। ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠেও কাপ না পাওয়ার দুঃখ আজ মুছল। খুব করে চেয়েছি মেসি একটি কাপ জিতুক। মেসি তোমাকে ভালোবাসি।’

আরও পড়ুন

×