ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আলোকচিত্রে পাখা মেলল নিসর্গের পাখিরা

আলোকচিত্রে পাখা মেলল নিসর্গের পাখিরা

রাজধানীর গুলশানে এজ গ্যালারিতে শনিবার আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা। 'দ্য উইংস অব ভাইব্র্যান্স' প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৬৫ প্রজাতির ৮৯টি পাখির ছবি - সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:০৯

গ্রীষ্মকালে ধীরগতির ঝর্ণা, নদী ও লেকের পানিতে মাছরাঙা পাখির দেখা মেলে। ঝোপঝাড়ের ডালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা এই ছোট্ট পাখি মাছ দেখামাত্রই ছোঁ মেরে শিকার করে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ শান্ত স্বভাবের এ পাখির নাগাল পায় সহজেই। তবে ইট-পাথরের রাজধানীতে তাদের দেখা মেলে না। সেই আক্ষেপ যেন কিছুটা ঘোচালেন ডা. আব্দুস সামাদ আলিম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।

'দ্য উইংস অব ভাইব্র্যান্স' নামের এ প্রদর্শনীতে মাছরাঙার পাশাপাশি খয়রা, নীল কান, সাদা গলা, লাল পাখ, বামন ও কালোটুপি মাছরাঙার দেখা পাওয়া গেছে। ছবি হলেও তারা যেন প্রাণবন্ত।

শনিবার রাজধানীর গুলশান ২-এর এজ গ্যালারিতে শুরু হয়েছে এ প্রদর্শনী। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বন জঙ্গল থেকে তোলা ৬৫ প্রজাতির ৮৯টি পাখির ছবি তাঁর এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশের। অন্যগুলোর ছবি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থেকে তোলা হয়েছে।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন। উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন, শিল্পী হাশেম খান, পাখি বিশেষজ্ঞ ও আলোকচিত্রী ইনাম আল হক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণীবিষয়ক আলোকচিত্রী ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণীবিষয়ক আলোকচিত্রী আনসার উদ্দিন খান পাঠান, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রমুখ।

প্রদর্শনী উপলক্ষে নিজের তোলা আড়াইশরও বেশি ছবি নিয়ে 'দ্য উইংস অব ভাইব্র্যান্স' নামে একটি বইও প্রকাশ করেছেন আলোকচিত্রী।

নিজের প্রথম প্রদর্শনী নিয়ে ডা. আলিম জানান, '২০১১ সালে একমাত্র সন্তানকে শেখানোর তাগিদ থেকে নিজে ফটোগ্রাফি শিখেছেন। পরে এ নেশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। এর পর জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে ফটোগ্রাফি। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি পাখির ছবি তোলায় ঝুঁকেছেন। সময় পেলেই তিনি ছুটে যান বনে-জঙ্গলে। দেশ-বিদেশের নানা পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই তাঁর এ প্রদর্শনীর আয়োজন। এ প্রদর্শনী চলবে আজ রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত।

প্রদর্শনীতে আসা বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ডা. আরেফ উদ্দীন আহমদ বলেন, ড. আলিম তাঁর প্রতিটি ছবিকে 'ফাইন আর্টস' এর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, পাখি আর প্রকৃতি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, আর প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচব।

আরেকজন পাখিপ্রেমী গুলশান ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান বলেন, পাখির ছবি তোলার বিষয়ে ডা. আলিম খুবই আগ্রহী। এমনও দিন গেছে ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি একই স্থানে বসে আছেন। আবার তিন দিন ধরে অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত পাখির দেখা পাননি। তিনি দেশ-বিদেশের গহিন অরণ্যে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন নতুন প্রজাতির পাখির সন্ধানে। ডা. আলিম একজন ক্লিনিক্যাল নিউরোলজিস্ট এবং পেশায় ব্যবসায়ী। কিন্তু হৃদয়ে একজন অনুরাগী ফটোগ্রাফার।

বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেছেন, হাজার বছর ধরে এই পাখিরা বাংলার ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েদের স্বপ্নের জগৎ তৈরি করেছে। পাখি পোষার বাসনা জাগিয়েছে মনে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই সব নানা রঙের, জাতের পাখি দেখেই নতুন প্রজন্ম মুগ্ধ হবে।

আরও পড়ুন

×