ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

এপাশে স্বামী, ওপাশে মেয়ে সীমা ছুটছেন বিরামহীন

এপাশে স্বামী, ওপাশে মেয়ে সীমা ছুটছেন বিরামহীন

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শুক্রবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ত্রিপর্ণা সরকারের পাশে মা সীমা চৌধুরী। ছবি-সমকাল

বকুল আহমেদ

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

একই হাসপাতালের পাশাপাশি কেবিনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন গৌতম কুমার সরকার ও তাঁর মেয়ে ত্রিপর্ণা সরকার। দু’জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। কখনও বাবা হুইলচেয়ারে পাশের কেবিনে গিয়ে মেয়েকে দেখে যাচ্ছেন, আবার কখনও মায়ের কাঁধে ভর দিয়ে বাবাকে এক পলক দেখে আসছে ত্রিপর্ণা। এমন কঠিন সময়ে একে অপরের সেবা করতে না পারার কষ্ট বাবা-মেয়ে দু’জনের মনেই। কিন্তু ত্রিপর্ণার কষ্ট যেন আরও বড়। হাসপাতালের বিছানায় থাকা সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্রী বলে, ‘বাবা অসুস্থ থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না। আমি অসুস্থ এটা বিষয় না, বাবা অসুস্থ এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের। সবসময় বাবার কাছে থাকতে ইচ্ছা করছে।’

গতকাল শুক্রবার দুপুরে আরও কিছু বলার আগেই মায়ের ডাকে কথা থামল ত্রিপর্ণার। কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মা সীমা চৌধুরী বললেন, ‘এই দেখো বাবা এসেছে তোমাকে দেখতে। স্নান করাতে নিয়ে যাচ্ছি। বাবাকে দেখে নাও।’ এ সময় একটু মাথা তুলে হুইলচেয়ারে বসা বাবাকে এক পলক দেখে নিল ত্রিপর্ণা। বাবাও ছলছল চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর স্বামীর হুইলচেয়ার নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন সীমা চৌধুরী।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার। স্কুলপড়ুয়া বড় মেয়ে ত্রিপর্ণা ও তাঁর এক দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ইস্কাটন গার্ডেন রোডে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেমি কেবিন ব্লকে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। সাত নম্বর সেমি কেবিনে গৌতম সরকার চিকিৎসাধীন। এই কেবিনে চারটি শয্যা। একটিও খালি না থাকায় ত্রিপর্ণাকে পাশের ছয় নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে।
স্বামী-সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন সীমা চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার রাতে দু’জনের একই সময়ে স্যালাইন চলছিল। সীমা একবার মেয়ের কাছে আসেন, আরেকবার ছুটে যান স্বামীর কাছে। দু’জনকে দেখভাল করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি।

সীমা চৌধুরী বলেন, ‘হাসিখুশি পরিবার আমাদের। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন।’
সীমা চৌধুরী জানান, মালিবাগ রেলগেটের পাশের এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তারা। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরের শিরোইলে। দুই মেয়ের মধ্যে ত্রিপর্ণা বড় আর সুকর্ণা সরকার ছোট। ১৫ দিন আগে ত্রিপর্ণার জ্বর আসে। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বাসাতেই তার চিকিৎসা চলছিল। এরই মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর তিনি ও ছোট মেয়ে জ্বরে পড়েন। পরদিন জ্বরে আক্রান্ত হন তাঁর স্বামী। সবাই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এর আগে ব্রেন স্ট্রোক করায় নিয়মিত চিকিৎসক দেখাতেন গৌতম সরকার। জ্বর থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকালে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসার জন্য যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান গৌতম। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তখনই তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় পর দিন ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট নেমে আসে ৫৭ হাজারে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্লাটিলেট ছিল ৩৭ হাজার।

আরও পড়ুন

×