ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান নির্মূল কমিটির

ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:৪১ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:৪৪
ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সর্বস্তরের ভোটারেরা যাতে নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেত পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। তারা এও বলেছেন, কোনো ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাস বা গোলযোগের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীদেরও তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে প্রয়োজন হলে সামরিক বাহিনী তলবসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আগেই গ্রেপ্তার করতে হবে। যাতে কেউ অতীতের মতো কোনো সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন: সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট প্রত্যাশা প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী ও সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। সভা সঞ্চালনা করেন শহীদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর তন্ময়।
সভার প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভীষিকাময় একটি সময় পার করে। সেই সময়টি যেন বাংলাদেশের আর না আসে সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনমত গঠনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’–এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা পুনরায় নির্বাচিত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে কোনো মূল্যে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে কেননা বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা পেশি ও অর্থশক্তি দিয়ে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চায়বে। তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান– তাদের চক্রান্তে কোনোভাবেই পা বাড়াবেন না এবং অনলাইন ও অফলাইনে তাদের প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তারাই বিদেশিদের সঙ্গে নিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। কারণ ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি বিএনপি-জামায়াত কীভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। আসন্ন নির্বাচনে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার যেন না হয় সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সংবিধানের ধারা রক্ষা করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। কাউকে নির্বাচনে আনার জন্য কারও মাথাব্যথা নেই, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও নয়। নির্বাচনে কতজন আসলো বা কতজন মানুষ উপস্থিত হলো সেটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি নয়। সুতরাং এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং যথাসময়ে ভোট করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। মানুষ যাতে নির্বাচন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে সেই পরিস্থিতি তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সকল বিরোধী শক্তি মিলে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের ষড়যন্ত্রে বিদেশিদের যুক্ত করে নিজেদের অসহায়ত্বই প্রকাশ করছে না বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেও খর্ব করছে। এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে অবশ্যই একতাবদ্ধ হয়ে তাদের সকল রকম ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।’
বিএনপি-জামায়াত জোট কর্তৃক ২০০১ সালে নির্বাচনকালীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষ আর ২০০১ সালের নির্বাচন চায় না। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, দখল, ধর্ষণ, নির্যাতন, রাজনৈতিক খুন চায় না। মৌলবাদী, কোন মানবতাবিরোধী ব্যক্তিকে মানুষ সংসদে দেখতে চায় না, তেমনি কোন সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ লোককে সংসদে দেখতে চায় না।’
ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তারা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করেছে। আর যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তারা প্রতিশ্রুতির বদলে দিচ্ছেন নানাবিধ বক্তব্য, যা কোনো নাগরিকের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। উভয় পক্ষের এইসব প্রতিশ্রুতি কিংবা বক্তব্যের কোনোটিই বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের স্বস্তি প্রদান করতে পারছে না।’
সভাপতির বক্তৃতায় সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত ৬২টি নির্বাচনী এলাকা আমরা চিহ্নিত করেছি, যেখানে অতীতে নির্বাচনকালে নির্বাচকমণ্ডলীকে বিভিন্নভাবে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই ৬২টি এবং সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারে এমন সব নির্বাচনী এলাকা পূর্বাহ্নেই কঠোর সতর্কতা ও নজরদারিতে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে সামরিক বাহিনী তলব করতে হবে এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আগেই গ্রেফতার করতে হবে, যাতে কেউ অতীতের মতো কোনো সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন ‘কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থকরা যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করেন সেই প্রার্থীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যা অতীতে কখনো করা হয়নি। অপরাধ থেকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন কেন– সুষ্ঠু রাষ্ট্র পরিচালনাও সম্ভব নয়। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। না করলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কখনও বন্ধ করা যাবে না। নির্বাচনী আচরণবিধিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বড় দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মকে ব্যবহার করে যেভাবে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেয় তা শুধু নির্বাচনী আচরণবিধির লংঘন নয়– গণতান্ত্রিক চেতনা ও মানবাধিকারকে বিপর্যস্ত করে।’