রাজধানীতে নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, সাবেক প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার ৭

ছবি: প্রতীকী
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪ | ১৯:৪৮ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ | ২২:২৯
রাজধানীর খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকায় আটকে রেখে নির্যাতন ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার মধ্যরাতে এক নববিবাহিতা তাঁর স্বামীকে নিয়ে খিলক্ষেতে এক বোনের বাসা থেকে সাভারের উদ্দেশে ফিরছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে ছয়-সাত যুবক গতিরোধ করে তাদের জোরপূর্বক বনরূপা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তরুণীর ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন।
ওই তরুণীর স্বামী সমকালকে জানান, ১৮ মে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের বাসা সাভারে। তাঁর স্ত্রী মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শুক্রবার অফিস থেকে খিলক্ষেত এলাকায় বোনের বাসায় যান ওই নারী। স্বামীও সাভার থেকে খিলক্ষেতে আসেন। বোনের বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর এলাকায় তাদের পূর্বপরিচিত এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল। এরই মধ্যে ওই নারী তাঁর স্বামীর কাছে নতুন বিমানবন্দর দেখার আবদার করেন। এরপর দু’জন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন। তৃতীয় টার্মিনালের কাছাকাছি এলাকায় প্রথমে চারজন তাদের গতিরোধ করে। এরপর সিএনজি অটোরিকশায় আরও তিনজন এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা খিলক্ষেতে বনরূপা আবাসিক এলাকায় একটি বাগান বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর ওই নারীর স্বামীর মোবাইল ফোনসেট ও নগদ ৫ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। মুক্তিপণ দিয়ে প্রথমে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকায় রফা হয়।
টাকা সংগ্রহের কথা বলে বনরূপা আবাসিক এলাকা থেকে বের হয়ে ভোররাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন ঘটনার শিকার নারীর স্বামী। পুলিশ ঘটনাটি জানার পরপরই সেখানে অভিযান চালায়। শুক্রবার রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সকালে নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্বামীকে ফোন করেন তিনি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীম বলেন, শুক্রবার রাতে ঘটনাটি জানানোর পরপরই অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জড়িত একজন ওই তরুণীর পূর্ব পরিচিত। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আবুল কাশেম সুমন ছাড়াও রয়েছে নূর মোহাম্মদ, হাসিবুল হাসান হিমেল, রবিন হোসেন, মীর আজিজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান হৃদয় ও পার্থ বিশ্বাস।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তরুণীর ওপর ক্ষোভ থেকে টার্গেট করে সহযোগীদের নিয়ে সুমন লোমহর্ষক এ ঘটনায় জড়ায়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের কালিকাপুরে। খিলক্ষেত এলাকায় অনেক দিন ধরে থাকে। খিলক্ষেত এলাকায় ওই নারী যাবেন– এটা কোনোভাবে জানতে পেরেই ছক করেছিল সুমন। এরপর বন্ধুদের একত্রিত করে সাবেক প্রেমিকার ওপর প্রতিশোধ নেয়।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের তথ্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে বেশ কিছু আলামত তারা জব্দ করেছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য এসব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিতে পাঠানো হবে। তারপর ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হবে।
ওই নারীর স্বামী সমকালকে বলেন, খুব দ্রুত ঘটনাটি ঘটে গেছে। প্রথমে জানতে চায় আমাদের সঙ্গে কী রয়েছে। মোবাইল সেট নিয়ে সিম খুলে দেয়। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর বললাম, মোবাইল ফোনসেট না পেলে কীভাবে যোগাযোগ করে টাকা দেব।
তিনি বলেন, এত রাতে বিমানবন্দর এলাকায় না যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বারবার নিষেধ করেছিলাম। সেখানে ছিনতাইকারীসহ অনেক অপরাধীদের দৌরাত্ম্য– এটাও বলেছিলাম। যেটা আশঙ্কা করেছি তার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। তারা জিম্মি করে প্রথমে প্রাণনাশের ভয় দেখায়। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর স্ত্রীকে কোনোভাবে শান্ত করতে পারছি না। সে এখনও ভয়ের মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, হাতের মেহেদির রং মোছার আগেই আমার স্ত্রী এমন ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হলো। যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি সাজ্জাদ ইবনে রায়হান বলেন, গ্রেপ্তাররা নেশার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আগে থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেপ্তার সবাইকে আজ আদালতে তোলা হবে।