শেখ হাসিনার পতনের পর বনে গেছেন বিএনপি
লোক লেলিয়ে খুন, ফাঁসানো হলো বিএনপি নেতাকর্মীকে
মোহাম্মদপুরের ত্রাস জিল্লুর

জিল্লুর
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বছিলা এলাকার ত্রাস খোন্দকার জিল্লুর রহমান। রয়েছে কিশোর গ্যাং ও নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী। খুন, চাঁদাবাজি থেকে জমি দখল– এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তাঁর বাহিনী করে না। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন নাছিমের ‘ডান হাত’ হওয়ায় বারবার পার পেয়ে গেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরই ভোল পাল্টান জিল্লুর। ‘জাতীয়তাবাদী সমবায় দল’ গড়ে সভাপতি বনে যান। জমি দখলে বাহিনী লেলিয়ে খুন করার পর এখন মামলায় প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর অভিযোগ, গিরগিটির মতো রং বদলাতে ওস্তাদ জিল্লুর। আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের হাত করে বাহিনীর মাধ্যমে তিনি জারি রাখেন ত্রাসের রাজত্ব। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জিল্লুর বাহিনীর লোকজন বিল্লাল গাজীকে (২৮) নৃশংসভাবে খুন করে। কুপিয়ে হত্যার পর তাঁর শরীর থেকে হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। জিল্লুর বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাসী মিজান, সালমান, শুক্কুর, আমিরসহ চিহ্নিতরা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে নিহতের মা রফিকা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এক নম্বর আসামি করা হয় ইদ্রিস মিয়াকে (প্রকৃত নাম হাফিজ মোহম্মদ ইদ্রিস), যিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর আত্মীয়। আওয়ামী লীগের রোষানলে ইদ্রিসের এক ভাই দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবন্দি।
তবে বুধবার মামলার বাদী রফিকা বেগম সমকালকে বলেন, কাগজে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। খুনিদের বাদ দিয়ে হাউজিং কোম্পানির লোকজন বিল্লালকে তাদের কর্মচারী উল্লেখ করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়েছে। আসামিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। হত্যাকারী এবং সেখানে উপস্থিত আমিরসহ অন্যদের আসামি করা হয়নি বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, মামলা করার সময় জিল্লুর রহমান থানায় উপস্থিত হয়ে প্রভাব খাটান। বাদী ও নিহতের স্বজনদের থানা থেকে কৌশলে অন্যত্র সরিয়ে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করেন।
বিল্লাল গাজীর বোন জামাই বিপু মিজি বলেন, ‘মামলার সময় লোকের মাধ্যমে আমাদের অন্যত্র নিয়ে যান জিল্লুর রহমান। পরে দেখেছি, তিনি পছন্দমতো আসামি করেছেন। হত্যাকারীদের নাম বাদ দিয়েছেন। আমরা এটি প্রত্যাহার করে আসল খুনিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জানা যায়, জাতীয়তাবাদী সমবায় দল নামে ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি বলে পরিচয় দেন জিল্লুর রহমান। মূলত ইদ্রিসের ‘গ্রাম বাংলা
হাউজিং প্রকল্প’ দখলে নিতে ত্রাস সৃষ্টি করছেন তিনি। গত ২২ আগস্ট সাভার থানায় জিল্লুর ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে জিডি করে গ্রাম বাংলা হাউজিং কর্তৃপক্ষ। এর পর ২৯ আগস্ট ঢাকা উদ্যানের ট্রলার ঘাটে বাহিনীর মাধ্যমে মুহুর্মুহু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন জিল্লুর।
গ্রাম বাংলা হাউজিংয়ের পরিচালক হাফিজ মোহম্মদ ইদ্রিস বলেন, জিল্লুর এতদিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করেছেন। এখন বিএনপি নেতা সেজে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ‘আকাশ নীলা হাউজিং’ নামে কাগজপত্র তৈরি করে আমাদের প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করছেন। এ ধারাবাহিকতায় আমাকে ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর নামে হত্যা মামলা দিয়েছেন। ককটেল বিস্ফোরণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
অভিযোগ বিষয়ে জিল্লুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলে রিসিভ হয়নি। এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।
জিল্লুর বাহিনীর বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক সমকালকে জানান, এমন ঘটনা তিনিও শুনেছেন। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দল নামে বিএনপির কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নেই। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার